মহাবিজ্ঞানী-কড
সাহিত্য

মহাবিজ্ঞানী কড

মহাবিজ্ঞানী কড

মুখলেছুর রহমান

 

জরুরি সভার আহ্বান করলেন মহাবিজ্ঞানী কড। তিনিই ‘Science the way of ‘invention’ নামক সংস্থার সভাপতি। তাঁর এই গবেষণা সংস্থায় কাজ করেন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত একদল দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী। তাঁরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করেন। মহাবিজ্ঞানী কড জানালেন, খুব শীঘ্রই তাঁরা নতুন গ্রহের সন্ধানে যাত্রা শুরু করবেন। তিনি একটি জার্নাল থেকে কিছু তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো পৃথিবীর কাছাকাছি একটি নতুন গ্রহের সন্ধান মিলতে পারে। আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে এমনটাই ধারণা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী নিকার। তিনি তাঁর গবেষণার কাজ শেষ করে যেতে পারেন নি। নিকার যেসব তথ্য রেখে গেছেন তা প্রায় একশ বছর পর আমেরিকার একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানী কর্ড সেই জার্নালের তথ্যের উপর ভিত্তি করেই এগিয়ে যেতে চান। জার্নালে নতুন গ্রহ সম্পর্কে যে সকল তথ্য দেয়া আছে তাতে দেখা যায় নতুন গ্রহে পানি, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও কিছু ভারী ধাতু মিলতে পারে। বিজ্ঞানী নিকার যেহেতু কাজটি শেষ করতে পারেননি তাই তাঁর রেখে যাওয়া তথ্য অনুসরণ করে বিজ্ঞানী কড় কাজটি শেষ করতে চান। এজন্যই জরুরি সভার আয়োজন। তাঁর এই গবেষণা দলে আছেন সবচেয়ে কম বয়সী বিজ্ঞানী স্ট্রিং। আছেন বিজ্ঞানী জেসাফ, বিজ্ঞানী কিহি, রেঙ্কলীন, ফিকসহ বেশ কয়েকজন।

 

সভাপতি বললেন, আমরা যে গ্রহের সন্ধানে যাত্রা করতে যাচ্ছি তা মোটেও সহজ কাজ নয়। আমাদের আগে অনেকেই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা খুবই সতর্কতার সাথে আমাদের অভিযান পরিচালনা করবো যাতে সফল হতে পারি। অভিযান হবে খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেখানে আগে যারা গিয়েছিল তারা কেউই পৃথিবীতে ফিরে আসেনি। নিকার যখন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন সেখানে পাঁচ সদস্যের দল ছিল। নিকার পৃথিবীতে অবস্থিত কন্ট্রোল রুমে বসে তাঁদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। তাঁদের বহনকারী স্কাউটশিপ যখন নতুন গ্রহের কাছাকাছি পৌঁছে তখন নিকার বুঝতে পারেন তাঁরা বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন। পৃথিবী থেকে বার বার তাদের সতর্ক করা হয়।

 

অভিযাত্রীদল বিজ্ঞানী রিকিংয়ের নেতৃত্বে নিরাপদে পৌঁছলেন নতুন গ্রহে। ক্যাপসুলটি খুলে গেল। তাঁরা নামলেন সেখানে। নেমেই তাঁরা বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করতে লাগলেন। প্রথমেই তাঁরা বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয় করলেন। অক্সিজেন পাওয়া গেল শতকরা ২৯.৯৫ ভাগ। তাঁরা যে অক্সিজেন মাস্ক নিয়েছিল তা ব্যবহার করতে হলো না। একে একে নমুনা পরীক্ষা করলেন আর তথ্য পাঠিয়ে দিলেন নিকারের নিকট। নিকার বিশ্লেষণ করে তথ্যগুলো যত্নসহকারে কম্পিউটারে ফাইল আকারে রাখলেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে সেখানকার প্রায় সবগুলো নমুনা পরীক্ষা করা হলো এবং পৃথিবীতে পাঠানো হলো। নিকার সেগুলো সংগ্রহ করে রাখলেন। হঠাৎ করেই নিকারের সাথে রকিংয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নিকারের রেখে যাওয়া তথ্য তাঁর মৃত্যুর প্রায় শত বছর পর জার্নালে প্রকাশিত হলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় গ্রহটি।

 

এবার বিজ্ঞানী কড পাঁচ সদস্যের দল গঠন করলেন। দলনেতা সিনিয়র বিজ্ঞানী রেঙ্কলীন। শুরু হলো অভিযান। রেঙ্কলীনের নেতৃত্বে তাঁরা যাত্রা করলেন নতুন গ্রহের সন্ধানে। পৃথিবীতে থাকবেন  নেতৃত্বে আরো একটি দল। তাঁরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন রেঙ্কলীনের সাথে। তাঁদের স্কাউটশিপ অবতরণ করলো নতুন  গ্রহে। ক্যাপসুলটি খুলে গেল। রেঙ্কলীন তাঁর দল নিয়ে পা রাখলেন নতুন গ্রহে। তাঁরা চারপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলেন। রেষ্কলীন নির্দেশ দিলেন বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ। করতে প্রথমেই তাঁরা বায়ুতে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করলেন। বায়ুতে প্রায় ৩৩ শতাংশ অক্সিজেন পাওয়া গেল। তাঁদের চিন্তা একটু কমলো। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন নমুনা তাঁরা মহাকাশ যানের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে লাগলেন। রেঙ্কলীন পরীক্ষার ফলাফল সিগন্যাল আকারে পৃথিবীতে বিজ্ঞানী কডের নিকট পাঠালেন। ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেল সেখানকার বায়ুতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ শতকরা ৫ ভাগ। ভারী ধাতুর মধ্যে আছে আয়রন, ম্যাংগানিজ, নিকেল, টাইটেনিয়াম ইত্যাদি। উপাদানগুলো গ্রহের মাটির সাথে মিশ্রিত উপাদানগুলো পৃথক করা সম্ভব হলো মহাকাশযানের ল্যাবরেটরিতে। ম্যাংগানিজ ১০ শতাংশ, নিকেল ০.৪ শতাংশ, আয়রন ৫ শতাংশ এবং টাইটেনিয়াম ১২ শতাংশ পাওয়া গেল। যাবতীয় তথ্য সিগন্যাল আকারে চলে আসলো পৃথিবীতে বিজ্ঞানী কডের নিকট। কড় তাঁর দল নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। নতুন গ্রহে যেহেতু অক্সিজেনেরর পরিমাণ যথেষ্ট সেহেতু সেখানে বসতি স্থাপনের কথা ভাবলেন কড। বসতি স্থাপন করা গেলে পৃথিবীর ওপর থেকে চাপ কমবে। যেহেতু মাটিতে বিভিন্ন ধাতুর উপাদানগুলো অত্যন্ত নগন্য তাই সেখানে প্রকৃত মাটির পরিমাণই বেশি। গ্রহটিকে যদি উজ্জীবিত করা যায় তাহলেই বসবাস সম্ভব। উজ্জীবিত করার অর্থ হলো মানুষ, পশু-পাখি, গাছপালা ইত্যাদি যাতে বেঁচে থাকতে পারে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা। সেখানে গাছপালা লাগানোর কথা চিন্তা করলেন কড। এ কাজে প্রথমেই প্রয়োজন হবে পানির। কড সিগন্যাল পাঠালেন রেঙ্কলীনকে । তিনি বুঝতে পারলেন সেখানে পানি বা বরফ জাতীয় কিছু আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি কডকে জানালেন, সেখানে পানি বা বরফের অস্তিত্ব জানার জন্য তাঁরা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। বিজ্ঞানী নিকার গবেষণা করেছিলেন প্রায় একশ বছর আগে। তখন পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহের যে অবস্থা ছিল তা এখন অনেকটাই বদলেছে। তাই নতুন এই গ্রহে তাঁরা আরো বিশেষ বিশেষ নমুনা দেখতে পেলেন। হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা লক্ষ্য করলেন সেখানে মানুষের পায়ের চিহ্ন। অর্থাৎ তাঁদের পূর্বে কেউ এই গ্রহে এসেছিল। তাঁরা আরো বেশি উৎসাহিত হলেন। তাঁরা লক্ষ্য করলেন সেখানে গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ জন্মেছে। মাটিতে পানির পরিমাণ পরীক্ষার জন্য সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করলেন। মাটিতে পানির পরিমাণ পাওয়া গেল ৫ শতাংশ। তথ্যটি কডকে জানানো হলে তিনি আনন্দিত হলেন। কারণ তিনি জানেন মাটির উপরিভাগে ৫ শতাংশ পানি পাওয়ার অর্থ হলো মাটির একটু গভীরে পানির পরিমাণ বেশি থাকবে। তিনি নির্দেশ দিলেন মাটির গভীরের নমুনা পরীক্ষার জন্য রেঙ্কলীন তাঁর দল নিয়ে মহাকাশযান থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু করলেন। এই কাজটি করতে তাঁদের পাঁচ দিন সময় লাগলো। তাঁরা একটি কূপ খনন করলেন। কৃপের ৫০ ফুট নিচে একটি অবজারভার মেশিন পাঠানো হলো। এটি ৫০ ফুট নিচ থেকে পরবর্তী ৬০০ ফুট গভীরে পর্যবেক্ষণ করতে পারে । ৪৫০ ফুট গভীরে পানির সন্ধান পাওয়া গেল এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। কিন্তু পানি সরাসরি পানের উপযোগী বা ব্যবহারের উপযোগী নয়। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানি ফিলট্রেশন বা রিফাইন করে ব্যবহার করতে হবে। বিজ্ঞানী কডকে জানানো হলো পানির অস্তিত্বের কথা। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন। নতুন গ্রহে তারা বসবাসের উপযোগী উপাদান পেলেন। গ্রহটির নাম নিয়ে চিন্তা করলেন। কড এটির

নামকরণ করলেন ‘New-95’। 

 

ইতোমধ্যে ২০ বছর পার করেছেন তাঁরা। সবার চেহারায় পরিবর্তন এসেছে তবে তা পৃথিবীর মতো নয়। পৃথিবীতে যেমন বয়স বাড়লে চেহারায় বয়সের ছাপ পরে সেখানে তেমনটি হয় না। পরিবর্তন হয়েছে খুবই সামান্য অর্থাৎ বয়স বাড়লেও এখানে মানুষ সহজে বৃদ্ধ হবে না। রেঙ্কলীন জানালেন তাঁদের প্রয়োজনীয় রসদ শেষ হয়ে আসছে। আর অল্প কিছু দিন থাকতে পারবেন তাঁরা । কড জানালেন পৃথিবী থেকে অতি শীঘ্রই মানুষ পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন তিনি । বিজ্ঞানী রেঙ্কলীনকে পৃথিবীতে ফিরে আসতে নির্দেশ দিলেন। রেঙ্গুলীন তাঁর অনুসন্ধানী দল নিয়ে নিরাপদে ফিরে এলেন পৃথিবীতে। রেঙ্কলীন এবং কড মানুষকে বুঝাতে লাগলেন নতুন গ্রহে পারি দেয়ার জন্য। খুব কম সংখ্যক মানুষ তাঁদেরকে বুঝতে চেষ্টা করলো। বেশির ভাগ মানুষই তাঁদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলো। তাঁরা হাল ছাড়লেন না, তথ্য উপাত্ত দিয়ে মানুষকে বুঝালেন। এক পর্যায়ে অনেককেই বুঝাতে সক্ষম হলেন তাঁরা। অনেকেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে যেতে চায় সেখানে। যারা পরিবার নিয়ে যেতে চায় সবাইকে একসাথে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে মানুষ ‘New-95′-এ যাত্রা শুরু করবে । নতুন পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হবে অর্থাৎ নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলতে শিখবে। নতুন এক পৃথিবী গড়বে তারা সেখানে। পৃথিবীর মত এতো যানজট, কোলাহল, দূষণ, মারামারি ও সংঘাতময় অবস্থা থাকবে না সেখানে। বিজ্ঞানী কর্ড তাঁর স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে গেলেন। তাঁর দল নিয়ে তিনিও পাড়ি দিতে প্রস্তুত হলেন। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তাঁরা নতুন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। তাঁদের স্কাউটশিপ গ্রহের কাছে এসে ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল।  ক্যাপসুলটি খুলে গেল। কড সবাইকে নামতে বললেন। আপনি আগে নামুন জবাব দিলেন রেঙ্কলীন। মহাবিজ্ঞানী কডের পদচিহ্ন দিয়েই শুরু হলো নতুন দিনের পথচলা। 

 

ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজে

মহাবিজ্ঞানী কড

Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!