সাক্ষাৎকার,  সাহিত্য

বিশেষ সাক্ষাৎকার: ড. আশরাফ পিন্টু

বিশেষ সাক্ষাৎকার: ড. আশরাফ পিন্টু

 

ড. আশরাফ পিন্টু একজন  শিশু সাহিত্যিক, গল্পকার ও গবেষক। শিশুসাহিত্য, অণুগল্প, কবিতা, উপন্যাস, আঞ্চলিক ইতিহাস ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রভৃতি বিষয়ে তিনি লিখে চলেছেন। তাঁর এ পর্যন্ত ৩৫টি বই প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: পাবনা জেলার গ্রাম-মহল্লার নামকরণের ইতিহাস, পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পাবনা অঞ্চলের লৌকিক ছড়া, পাবনা জেলার লোক-ঐতিহ্য ও স্থাননাম, ক্ষেপু উল্লাহ বয়াতির জীবন ও সাহিত্যকর্ম, সুজানগরের ইতিহাস, সাঁথিয়ার ইতিহাস, আটঘরিয়ার ইতিহাস, ওমর আলীঃ জীবন ও সাহিত্যকর্ম, শাহজাদপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বাংলাদেশের প্রবাদে সমাজজীবন, হিগিন বিগিন, অন্তরালের মুখোশ, বাংলা সাহিত্যের বিবধ রতন (পাণ্ডুলিপি পুরষ্কার প্রাপ্ত), ওয়েলকাল টু মিরর ওয়ার্ল্ড, টাইম মেশিন অব দ্য এরিয়া-৫১, জেলে ও জেলিয়ান, হোয়াইটহোল, মহাজাগতিক বিপর্যয় উল্লেখযোগ্য।

 

গত ৬ জুলাই, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ‘আমাদের সুজানগর’ এর সাথে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ‘আমাদের সুজানগর’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক প্রকৌশলী মো. আলতাব হোসেন। ‘আমাদের সুজানগর’ এর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হলো।

 

আমাদের সুজানগর:  করোনাকালীন সময়ে কেমন আছেন?

ড. আশরাফ পিন্টু: আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তবে দূরের ও কাছের অনেক প্রিয়জন করোনায় ইহজগৎ ত্যাগ করছে, এর জন্য বেদনাবোধ হয়। আল্লাহ এ বালা মুসবত থেকে সবাইকে রক্ষা করুক-এই কামনা করি।

 

আমাদের সুজানগর:  লেখালেখির জগতে কীভাবে এলেন?

ড. আশরাফ পিন্টু: প্রায় সব লেখকই প্রথমে শখের বশে লেখালেখি করেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমার আব্বাও লেখালেখি করতেন। তিনি ১৯৪৬ সালে একটি পারিবারিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই পাঠাগার আমাদের পরিবারে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এই পাঠাগারে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা রাখা হতো। মূলত শিশুকালে পাঠাগারের বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ে আমার মনে লেখক হবার বাসনা জাগে। তখন মনে হতো আমার লেখাও যদিও এমন ছাপার অক্ষরে দেখতে পেতাম। এছাড়া আমার আব্বার লেখাও আমাকে প্রভাবিত করেছে। 

 

আমাদের সুজানগর: কতদিন যাবৎ কখন থেকে লেখালেখি করছেন? 

ড. আশরাফ পিন্টু: আমি সেই ৩য় শ্রেণিতে পড়াকালীন লেখালেখি শুরু করি; তখন অবশ্য আমার লেখা ছাপা হয় নি। আমার প্রথম লেখা ছাপা হয় ১৯৮৪ সালে ‘সপ্তডিঙা’ নামে একটি শিশু-কিশোর মাসিকে। এরপর থেকেত এ পর্যন্ত লেখা অব্যাহত আছে ইনশাল্লাহ।

 

আমাদের সুজানগর: লেখার ক্ষেত্রে কি কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেন?

ড. আশরাফ পিন্টু: কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে লেখালেখি হয় না। মাথার মধ্যে যখন কোনো লেখা ঘুরপাক খায় মূলত তখনই কলম বা ল্যাপটপ নিয়ে বসি। একটি ছোট্ট অণুগল্প লিখতে অনেক চিন্তা করতে হয়, অনেক সময় পার হয়ে যায়, তবুও লেখা হয়ে ওঠে না। আবার যখন বোধ চলে আসে সাথে সাথে লেখা হয়ে যায়। লেখা  মাথায় এলে দুপুর রাতে ঘুম ভেঙেও অনেক সময় লিখতে বসি।

 

আমাদের সুজানগর: সাধারণত কোন সময় লেখেন?

ড. আশরাফ পিন্টু: সাধারণত অবসর সময়ে লেখা বেশি হয়; তবে এর কোনো রাতদিন নেই।

 

আমাদের সুজানগর: লেখালেখি কেন করেন?

ড. আশরাফ পিন্টু: প্রথমে করেছি শখের বশে, এখন করি সমাজের দায়বদ্ধতা থেকে।

 

আমাদের সুজানগর: আপনার এ পর্যন্ত কয়টি বই বেরিয়েছে?

ড. আশরাফ পিন্টু: আমার এ পর্যন্ত ৩৫টি বই বেরিয়েছে। এরমধ্যে শিশুসাহিত্য, অণুগল্প, কবিতা, উপন্যাস, আঞ্চলিক ইতিহাস ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ গ্রন্থ রয়েছে।

 

আমাদের সুজানগর: কোন বিষয়টি আঞ্চলিক ইতিহাস লিখতে আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?

ড. আশরাফ পিন্টু: আমি এমফিল/পিএইচডি করার সময় এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমার এমফিল এর বিষয় ছিল- ‘পাবনা অঞ্চলের লৌকিক ছড়া’। মূলত তখন (২০০৫) থেকেই এ বিষয়ে আমার আগ্রহ জন্মে।

 

আমাদের সুজানগর: সুজানগরের ইতিহাস গ্রন্থটি সম্পর্কে কিছু বলুন। 

ড. আশরাফ পিন্টু: সুজানগরের ইতিহাস গ্রন্থটি খুব কম সময়ে (চার মাস) রচনা করা হয়েছে। মূলত করোনার অখন্ড অবসরের কারণে এটি রচনা করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। সাঁথিয়ার ইতিহাস রচনা করার পর সময় বেচে গেল। আমার সহলেখক মিজান খন্দকার বলল, স্যার এখন কি করা যায়? আমি বললাম আরেকটি উপজেলার কাজ ধরি। তখন সুজানগরকে আমরা বেছে নিই। কারণ সুজানগর একটি জমিদার সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে তাঁতিবন্দ ও দুলাইয়ে দুই জন বড় জমিদার ছিলেন, যারা দেশের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন। যাইহোক,  প্রথমে ভেবেছিলাম বইটি ২০২২ সালের বইমেলায় বের করব। কিন্তু একটানা ফিল্ডওয়ার্ক করার পর মনে হলো এই বইমেলাতেই (২০২১) বইটি বের করতে পারব এবং হয়েছেও তাই।

 

আমাদের সুজানগর : তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন?

ড. আশরাফ পিন্টু: তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তেমন বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। এলাকাটা আমাদের অপরিচিত মানে আমাদেরকে অনেকেই চেনে না। তবু অনেকে সাদরে তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে। যেমন, রানিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পীযুস সাহেব, সাতবাড়িয়া কলেজের অধ্যক্ষ, আ. বাছেত, বনকোলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল হুদা, আমাদের সুজানগর ওয়েবসাইটের সম্পাদক  ইঞ্জিনিয়ার মো: আলতাব হোসেন এমন বহু মানুষ তথ্য প্রদান করেছেন। ছোট-খাটো যে সমস্যা হয়েছে সেগুলো ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।

 

 

আমাদের সুজানগর : সামনে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

ড. আশরাফ পিন্টু: আমার লেখালেখির অনেকগুলো শাখা-প্রশাখা রয়েছে; যেমন- সায়েন্সফিকশন, অণুগল্প, মুক্তিযুদ্ধ, ফোকলোর ও আঞ্চলিক ইতিহাস। আঞ্চলিক ইতিহাস রচনায়  ইতোমধ্যেই চারটি উপজেলার ইতিহাস রচনা করা হয়ে গেছে এবং পাবনা কেন্দ্রিক আমার মোট বইয়ের সংখ্যা ১১টি। বর্তমানে বেড়া উপজেলার ইতিহাস নিয়ে কাজ করছি। আমাদের পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গবেষক ড. এম. আব্দুল আলীম আমাকে বলেছেন, আপনি পাবনার বাকী উপজেলাগুলো নিয়েও ইতিহাস লেখেন। ওর কথাটা আমার ভালো লেখেছে। মনে মনে ইচ্ছে আছে, তবে পারব কিনা তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। 

 

আমাদের সুজানগর: সাহিত্যের কোন মাধ্যমে লিখতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

ড. আশরাফ পিন্টু: সাহিত্যের প্রায় সব মাধ্যমই আমার পছন্দের বিষয়। এক সময় ছড়া লিখতাম ছোটদের জন্য। বর্তমানে সায়েন্সফিকশন লিখছি। তবে অণুগল্প লিখতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি।

 

আমাদের সুজানগর: এবারের বই মেলায় কোন কোন বই বের হয়েছে? 

ড. আশরাফ পিন্টু: এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক বই (৭টি) বেরিয়েছে, এগুলো হলো: ওয়েলকাম টু মিরর ওয়ার্ল্ড (সায়েন্সফিকশন, পাললিক সৌরভ, ঢাকা), টাইম মেশিন অব দ্য এরিয়া-৫১ (সায়েন্সফিকশন, পাললিক সৌরভ, ঢাকা), মিথের গল্প (পাললিক সৌরভ, ঢাকা), সাঁথিয়ার ইতিহাস, (পাললিক সৌরভ, ঢাকা), আটঘরিয়ার ইতিহাস, (গতিধারা প্রকাশনী, ঢাকা), সুজানগরের ইতিহাস (পাললিক সৌরভ, ঢাকা), বাংলা সাহিত্যের বিবিধ রতন (জলকথা, ঢাকা)।

 

আমাদের সুজানগর: আপনার শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই 

ড. আশরাফ পিন্টু: আমি ১৯৭৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হই শাহজাদপুর থানার গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের নাম ফকির পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওখান থেকে ক্লাসে প্রথম হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হই পার্শ্ববর্তী গ্রামের বিনোটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর তৃতীয়  থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ি ভেড়াখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৮২ সালে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই পাবনার ঐতিহ্যবাহী স্কুল গোপাল চন্দ্র ইন্সটিটিউশনে। (ষষ্ঠ শ্রেণিতে তিনি কোথাও পড়েন নি)। এরপর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে পাবনা জেলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই। এ স্কুল থেকে ১৯৮৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হই এবং ঐ বছরই (’৮৬-৮৭ শিক্ষাবর্ষে) একাদশ শ্রেণিতে (বিজ্ঞান বিভাগে) ভর্তি হই সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে।

১৯৮৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে। এরপর বিয়য় পরিবর্তন করে প্রণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হই। এ বিষয়ে মন না টেকার কারণে ঐ বিষয় ত্যাগ করে এডওয়ার্ড কলেজে গণিতে অনার্সে ভর্তি হই। এখানেও মন না টিকলে এক বছর পরে ঐ কলেজেই বাংলা অনার্সে ভর্তি হই। 

 

আরও পড়ুন বিশেষ সাক্ষাৎকার: এম আবদুল আলীম

 

মূলত লেখালেখির প্রতি অদম্য কৌতুহল আর আগ্রহের কারণেই আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ছেড়ে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে (দ্বিতীয় বছরে) বাংলা অনার্সে (১৯৯০) ভর্তি হন। এজন্যে পরিবারের সদস্যদের কাছে হই অপাঙক্তেয় আর বন্ধু-বান্ধবদের কাছে হই উপহাসের পাত্র। পরিবারের শ্রদ্ধেয় অনেকেই আমাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ছেলে কবি হবে, এজন্য সায়েন্স ছেড়ে আর্টস নিয়েছে। ওদিকে কলেজে এসে দেখি ক্লাসে ছাত্র (আমাকে দিয়ে) মোট তিনজন। এর মধ্যে একজন পড়া ছেড়ে চলে যায়, অন্যজন সাবজেক্ট পরিবর্তন করে অন্য বিভাগে ভর্তি হয়। এমতাবস্থায় জনৈক শিক্ষক (ক্লাস নেওয়া থেকে রেহাই পাবার জন্যে) আমাকে বাংলায় পড়তে অনুৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, বাংলা পড়লে চাকুরী পাওয়া যাবে না, এমনকি কোনো অভিভাবক মেয়েও বিয়ে দেবেন না। (শিক্ষকের) এমন গুরু-মন্তরে আমার চেতনায় বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়। ফলে সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে এবং একটু নীরব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েই বাংলায় সাহিত্যে লেখা-পড়া করি।

 

এরপর ১৯৯২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে (৫৫% মার্ক নিয়ে ) অনার্স পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে এমএ ভর্তি হই।  ১৯৯৪ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে (৫৪% মার্ক নিয়ে) এমএ পাস করি। এরপর ২০০৭ সালে ফোকলোর বিভাগ থেকে এমফিল এ উত্তীর্ণ হই এবং ২০১৩ সালে একই বিভাগ থেকে পিএইচডি প্রাপ্ত হই।

আমি এমএ পাস করার পরপরই বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করি। বর্তমানে এই কলেজেই অধ্যাপনা পেশায় নিয়োজিত আছি ।

 

আমাদের সুজানগর: আপনার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।

ড. আশরাফ পিন্টু: আমরা তিন ভাই তিন বোন। অন্য দুইভাই কলেজে অধ্যাপনা করেন (একজন অবসরে)। বোন তিন জন গৃহিণী। বাবা চাকুরি করতেন। বাবা-মা দু’জনেই পরলোকগত। ২০০১ সালের ৩রা আগষ্ট পাবনা শহরের আটুয়া নিবাসী মমতাজ আলি শেখের তৃতীয় কন্যা রূপালি আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমাদের এক ছেলে ও এক  মেয়ে। ছেলের নাম অবিক আশরাফ স্বনন এবং মেয়ের নাম ওয়ালিদা আশরাফ মিমোসা। ওরা যথাক্রমে একাদশ ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী।

স্বপরিবারে-ড.-আশরাফ-পিন্টু
স্বপরিবারে ড. আশরাফ পিন্টু

 

আমাদের সুজানগর : লেখালেখিতে পরিবার থেকে কি উৎসাহ পান? 

ড. আশরাফ পিন্টু: অবশ্যই। উৎসাহ না পেলে এভাবে এগুনো পারতাম কি? বাবা-মা বেঁচে থাকতে উৎসাহ দিতেন, এখন স্ত্রী, ছেলেমেয়ে উৎসাহ প্রদান করে। তবে ছাত্রজীবনে আমার মেজভাই খুব শাসন করতেন। ওনার ধারণা ছিল লেখালেখির কারণে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

 

আমাদের সুজানগর: অনলাইন/ফেসবুকের সাহিত্যচর্চা এবং এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

ড. আশরাফ পিন্টু: যুগের পরিবর্তনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয় এবং এটা হবেই। এক সময় মুদ্রণ যন্ত্র ছিল না, হাতে লিখে পত্রিকায় লেখা প্রকাশ হতো। এরপর মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের পর ছাপার অক্ষরে লেখা প্রকাশ হতে লাগল। কিছুদিন আগেও আমরা হাতে লিখে পত্র-পত্রিকায় লেখা ডাকযোগে পাঠিয়েছি। এখন লেখা ইমেইল করি। ফেসবুকে লেখালেখিতে অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। প্রায় সকলেই ইতিবাচক মন্তব্য বা প্রশংসা করে। আবার নিজের লেখা নিজে মুল্যায়ন করা কঠিন; ফলে আমি ভালো লিখছি না মন্দ লিখছি এ সম্পর্কে বোঝা দূরহ হয়ে পড়ে। এজন্য অনেকের লেখার মান মানসম্মত হয় না। তবে কিছু সাহিত্যধর্মী অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকরা বাছাই করে ভালো লেখা ছাপেন। পরিশেষে বলা যায় এর ভালোমন্দ দুটো দিকই আছে।

 

আমাদের সুজানগর: অনলাইন এবং পত্রিকায় নতুন কাদের লেখা ভালো লাগে?

ড. আশরাফ পিন্টু: অনেকের লেখাই ভালো লাগে, তবে এই মুহূর্তে নির্দিষ্টভাবে নাম বলতে পারব না।

 

আমাদের সুজানগর: নতুনদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন। 

ড. আশরাফ পিন্টু: নতুনদের উদ্দেশ্যে বলব- ভালো লিখতে চাইলে প্রচুর পড়তে হবে; যারা ভালো লেখেন তাদের বই পড়তে হবে। বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে থাকাকালীন আমি অনেক বড় বড় কবি-সাহিত্যিকদের বাসায় গিয়েছি। দেখেছি তাদের বাসাটাই যেন লাইব্রেরি। বাসার রুমে রুমে বই আর বই। এদের মধ্যে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখের নাম বলা যায়।   

কবি-শামসুর-রাহমানের-সাথে (১৯৯৭)
কবি শামসুর রাহমানের সাথে (১৯৯৭)
কথাশিল্পী-হুমায়ূন-আহমেদের-সাথে (১৯৯৭)
কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের সাথে (১৯৯৭)
আমাদের সুজানগর: লেখক জীবনে কি আপনার কোনো অতৃপ্তি আছে?

ড. আশরাফ পিন্টু: লেখক জীবনে আমার কোনো অতৃপ্তি নেই। আমি মনের আনন্দে দু’হাতে লিখে চলেছি। সেদিনই আমার অতৃপ্তি হবে যেদিন আমি আর লিখতে পারব না।  

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন ড. আশরাফ পিন্টু
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন ড. আশরাফ পিন্টু
আমাদের সুজানগর: আমাদের দেশের কথাসাহিত্যের গতি প্রকৃতি আপনার কাছে কী রকম মনে হয়?

ড. আশরাফ পিন্টু: আমাদের দেশে কথাসাহিত্য অনেক এগিয়ে গিয়েছে। একসময় অণুগল্প ছিল না; এখন ছোটগল্পের পাশাপাশি অণুগল্পও বেশ এগিয়ে গেছে। অনেকে উপন্যাসও বেশ ভালোর লিখছেন। তবে লেখাকে বিশ্বমানের করতে আরও ভালো লিখতে হবে।

 

আমাদের সুজানগর: অবসর সময়ে আপনি কী করেন?

ড. আশরাফ পিন্টু: অবসরে আমি বই পড়ি এবং জীবন ঘনিষ্ট  ফিচার ফিল্ম দেখি। বলতে গেলে অবসর সময়ও আমি লেখালেখির ভিতরে কাটাই।

 

আমাদের সুজানগর: অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে

ড. আশরাফ পিন্টু: আপনাকেও ধন্যবাদ 

 

ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজে

বিশেষ সাক্ষাৎকার: ড. আশরাফ পিন্টু

Facebook Comments Box

প্রকৌশলী মো. আলতাব হোসেন, সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ সাহিত্য সংকলনের সম্পাদক এবং ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক তিনি। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ সালের ১৫ জুন, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!