ফেসবুক-মেসেঞ্জারবিহীন কোয়ারেন্টাইন
ফেসবুক-মেসেঞ্জারবিহীন কোয়ারেন্টাইন
প্রতিদিনই দেশে থাকা স্ত্রী সন্তানদের সাথে কয়েক দফা কথা হয়। মুশকিল হল ছোট ছেলেকে নিয়ে। ওর বয়স সবে দুই বছর আট মাস। ফোন দিলে কিছু কিছু সময় আর কাউকে কথা বলতে দেয় না। এমনকি বড় ছেলেকেও নয়। ও নিজেও এখনো সব কথা বলতে পারে না। শুধু বলবে, অ্যালো, বাবা কি কল (কর)? আবার কল কাটতেও দেবে না। ভিডিও কল দিয়ে সামনে বসে থাকতে হবে। আর মাঝে মাঝে অ্যালো, বাবা কি কল বলবে। ভাগ্যিস দেশ থেকে আসার আগে স্ত্রীর মোবাইলে একটা উইচ্যাট একাউন্ট খুলে দিয়েছিলাম। কোন কারণে অন্যান্য মাধ্যমে কথা না বলতে পারলেও যাতে উইচ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়। কারণ চীনারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে উইচ্যাট ব্যবহার করে। এটার মাধ্যমেই প্রতিদিন স্ত্রী-সন্তানদের সাথে কথা হয়। নইলে তো বিপদেই পড়তে হত।
কারণ নিহাও মোবাইল কোম্পানির যে চায়না সিম দিয়েছে তা দিয়ে চীনের বাইরে কথা বলা যায় না। আবার হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইবারে ঠিকমত সংযোগ পাওয়া যায় না। চীনে মেসেঞ্জার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল, জিমেইল, ইউটিউব স্বাভাবিকভাবে চলে না। এগুলো চালাতে হলে ভিপিএন অ্যাপস লাগে। আসার আগে একটা ভিপিএন অ্যাপস ডাউনলোড দিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সেটা ঠিকমত কাজ করে না। মাঝেমধ্যে একটু আধটু কানেকশন পায়। তাই ফেসবুক, মেসেঞ্জারও ঠিকমত চলে না।
আরও পড়ুন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দেশে
রুবি এবং মার্কের পরে এখানে সবচেয়ে বেশি খোঁজখবর নেন চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালে কর্মরত মোহাম্মদ তৌহিদ। প্রায় প্রতিদিনিই ফোন করে। সে বেচারাও তার পেইড ভিপিএন অ্যাপস উইচ্যাটের মাধ্যমে আমার মোবাইলে পাঠানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। অগত্যা কিছু করার নাই। কারণ নতুন করে কোন ভিপিএন অ্যাপস ডাউনলোড দেয়া যাবে না। ভিপিএন ডাউনলোডের জন্যও ভিপিএন অ্যাপস লাগে। কয়েকদিন পার হলেও এ ব্যাপারে কোন সুরাহা হয়নি। মাঝেমধ্যে হঠাৎ হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপ সংযোগ পাওয়া যায়। দেশ থেকে দু’একজন কল করলে দেখি রিসিভ হয়। কিন্তু আমি কল করতে গেলে আর যায় না। বর্তমানে ফেসবুক-মেসেঞ্জার ছাড়া বাংলাদেশ অচল।
যোগাযোগের কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু এগুলো ছাড়া এই লম্বা সময় কাটানোও তো মুশকিল। কুনমিংয়ে এখন সুর্য ওঠে সকাল সোয়া ছয়টায় আর অস্ত যায় সন্ধ্যা আটটায়। সন্ধ্যা আটটা লেখায় অবাক হওয়ার কিছু নাই। কারণ সূর্য ডোবেই তো আটটার সময়। তাহলে রাত আটটা বলি কি করে? সে হিসেবে দিনের দৈর্ঘ্য বেশ লম্বা, ১৪ ঘণ্টা। ঘুমিয়ে আর দিনের কতক্ষণ পার করা যায়। সবগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সচল থাকলে অন্তত দেশের অনেকের সাথে যোগাযোগ হত। কথাবার্তা বলে অথবা ফেসবুকিং করে কিংবা দেশ-বিদেশের খবর পড়ে খানিকটা সময় কাটানো যেত।
আরও পড়ুন ঘুরে এলাম পর্তুগাল
চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলি পার করা যায়। শেষে মনে মনে একটা রুটিন ঠিক করে নিলাম। সকালে উঠে এক্সারসাইজ, নাস্তার পর লেখালেখি। দুপুরে আবার একটু এক্সারসাইজ খাওয়া এবং টিভি দেখা। বিকেলে পড়াশোনা বিশেষ করে ফেলোশিপ গ্রুপে যেসব লেখা দেয়া হয় সেগুলো এবং সন্ধ্যার পর সেগুলো নিয়ে গ্রুপে আলোচনায় যোগদান। সম্ভব হলে সন্ধ্যার সময় স্বল্প সময়ের জন্য আরেকদফা এক্সারসাইজ। এই হল মোটামুটি আমার কোয়ারেন্টাইন রুটিন। কতটা মানা যাবে সেটা অবশ্য সময়ই বলে দেবে। লেখালেখি করতে গিয়ে দেখি আরেক সমস্যা। কোনকিছুতে আটকে গেলে জানার উপায় নাই। গুগলও ওপেন হয় না। সাধারণত কোন কিছুতে কনফিউশন হলে গুগলের সাহায্য নেয়া যায়। লেখালেখির জন্য যা খুবই দরকারি। অগত্যা ঠিক করলাম বাইরের কিছু লিখব না। যা লিখব চীন নিয়েই লিখব। তাতে আর সমস্যা হবে না। কারণ এই সংক্রান্ত লেখালেখির জন্য কোন তথ্য দরকার হলে ফেলোশিপের মেন্টরদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যাবে।
বেড রুম এবং ড্রয়িং রুমে বিশাল বিশাল দুটি টিভি মনটির। শুরুতে মনে মনে খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে, যাক ফেসবুক না থাকলে কি হবে কালক্ষেপনের আরেকটি উপাদান তো আছে। কিন্তু টিভি দেখতে গিয়ে হল আরেক বিপত্তি। ৪০ টার মত চ্যানেল। একটা বাদে সবগুলোই চায়না ভাষার। মান্দারিন ভাষায় অনুষ্ঠান চলে। চীনা ভাষা তো আর বুঝি না। কিছু না বুঝলে তো টিভি দেখা যায় না। সিজিটিএন নামে একটা চ্যানেল শুধু ইংরেজি। তাও সবসময় ডকুমেন্টারি চালায়। অনেকসময় একই ডকুমেন্টারি রিপিট চালায়। ডকুমেন্টারি আর কতক্ষণ কতবার দেখা যায়। ডকুমেন্টারির মত রসকষহীন জিনিস বার বার দেখতে কাঁহাতক আর ভাল লাগে। শেষে টিভি দেখতে গিয়ে আমার অবস্থা হয় ভিক্ষা চাই না মা কুত্তা সামলাও। তবে শেষদিকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। ভিপিএন অ্যাপস কাজ করায় ফেসবুক, মেসেঞ্জার, জিমেইলসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাঝেমাঝে ওপেন করতে পেরেছি।
আরও পড়ুন চীনের ডায়েরি-
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
৭ম পর্ব
৮ম পর্ব
৯ম পর্ব
১০ পর্ব
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
ফেসবুক-মেসেঞ্জারবিহীন কোয়ারেন্টাইন