প্রেমের পদ্য-০৩
প্রেমের পদ্য-০৩
রেজাউল করিম শেখ
তেরো
আর আমার কোনো অসীম বেদনা নাই
নিমগ্ন রাতের পাখিরা জানে—
সাত রঙা বেদনারা ভেসে বেড়ায়
সাম্যহীন পৃথিবীর বুকে…
উড়ে উড়ে—ঘুরে ঘুরে—বুনে যায়—
রেখে যায়—তাদের পূর্ব পুরুষের ইতিহাস—
যে বা যারা পাথরের বুকে জল ঢেলে ফলিয়েছে ফসল;
সোনালী—রূপালী ফসল। আর তারা গান গায়—
সন্ধ্যায়—আসন্ন ভোরের; সুস্মিত সৌরভের।
তারপর ঘুমোয় তারা জল ও জালের চৌকিতে।
কারণ বেদনারা জানে—
হিংস্র হায়েনার হল্লায় হলাহল হ’লো শুধু জলের গান।
আর—তাই শুধু বেদনা উড়াই
আর আমার কোনো অসীম বেদনা নাই।
চৌদ্দ
হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত আমি
তবুও হাঁটতে চাই
তবুও চলতে চাই—
সুষমামন্ডিত সুদীর্ঘ পথ
সুরোভিত সময় না আসুক
না থাক কোনো শিল্পীত রথ।
পনেরো
এখনো লেখোতো?
নাকি ছেড়েছো বহুদিন আগে?
তোমার সে কবিতার খাতাখানি আছে?—
লাল মলাটে বাঁধানো ভেতরে সাদা পাতা
লাল-নীল কালির আঁকাআঁকি
মাঝে মধ্যে কাঁঠ পেন্সিলের দাগ।
আমার মনে হতো পাগলামি!
তুমি বলতে—
‘জলহীন শুষ্ক মরু বুকের তীব্র আর্তনাদ!
আর আমার ভালোবাসা—লাল—নীল।’
আচ্ছা, ভালোবাসা কি লাল-নীল হয় কখনো?
যা হোক—
তোমার কাঠপেন্সিলটা দারুন লাগতো আমার!
জলহীন—তবু নির্ভার।
ষোলো
এসব দিন—মাস—বছর গুনতে গুনতে-
অরুণিমা কেঁদেছে—কেঁদেছে নীলিমা।
আর আমি ছুটেছি ভুঁইচাপা—
ঘাসফুলের পেছনে; প্রজাপতির মতো।
তবুও আজ এই ক্লিষ্ট সন্ধ্যায়
কার্নিশে বসা দাঁড়কাক ব’লে গেলো:
এই পরোন্মুখ জীবনের গীত গাও
বীণার তারে—ও সন্ধ্যা বাদক।
কিন্তু! মৃত নারীর ভিজে কান্নায়-
ভারী বাতাস কী করে সরাই?
কী করে গাই?—
প্যাপীরাসে সুলিখিত সঙ্গীত,
কিশোরীর আর্ত চিৎকার ফেলে!
সতেরো
প্রেমের নদীতে নৌকা ছেড়েছি
জলহীন তবু দাঁড় বেঁধেছি
হাল ধরেছি, পাল দিয়েছি তুলে…
নীল যমুনার জলে কৃষ্ণ ডুবে মরে
কালো কাপড়ে বাঁধা প্রেমিকার চোখ!
আর তোমরা বুক চিতিয়ে বলোÑ
আমরা মুক্ত পাখি
আকাশে ডানা মেলি
ঠোঁকর মারি ফসলের মাঠে।
অথচ এ কথা অন্ধ-বোবা-কালা মানুষটাও জানে-
প্রেমিকটা মরে গেলে প্রেমিকার আর কী থাকে,
নির্মোহ বেদনা নিয়ে কিছু জল-কাদা ছাড়া !
জানি তোমাদের সুঁচালো ঠোঁট দক্ষ ওসব কাদা ঘাঁটায়।
প্রেমের নদীতে নৌকা ছেড়েছি
জলহীন তবু দাঁড় বেঁধেছি
হাল ধরেছি, পাল দিয়েছি তুলে…
আরও পড়ুন
প্রেমের পদ্য-০১
প্রেমের পদ্য-০২
প্রেমের পদ্য-০৪
প্রেমের পদ্য-০৫
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
প্রেমের পদ্য-০৩