ধূপছায়া-সন্ধ্যা
সাহিত্য আলোচনা

ধূপছায়া সন্ধ্যা: প্রেমের স্নিগ্ধ রূপমাল্য

ধূপছায়া সন্ধ্যা: প্রেমের স্নিগ্ধ রূপমাল্য

@ আলতাব হোসেন

কবি মঞ্জুরুল ইসলামের কবিতা ‘ধূপছায়া সন্ধ্যা’ প্রেম, স্মৃতি এবং অনুভূতির এক মনোমুগ্ধকর চিত্র তুলে ধরে। কবিতাটি তার শৈল্পিকতায় গভীর, আবেগে তীব্র এবং ভাষার মাধুর্যে অপূর্ব। ধূপছায়ার মায়া এবং সন্ধ্যার আবেশে, কবি প্রেমের অতলান্তিক অনুভূতিকে পাঠকের হৃদয়ে ছুঁয়ে দেন।

কবিতার সূচনা নীরবতার মুগ্ধতায়:

“ধূপছায়া সন্ধ্যার আবেশে হারিয়েছ নীরব মুগ্ধতার গভীরে..” এই পঙ্‌ক্তিতে কবি সন্ধ্যার এক অদ্ভুত আবেশ তৈরি করেন। ধূপছায়া সন্ধ্যা এখানে শুধু সময়ের একটি রূপ নয়; এটি এক ধরনের অনুভবের প্রতীক। নীরবতা এখানে মুগ্ধতা এবং প্রেমের গভীরতার প্রতিচ্ছবি। কবির ভাষা পাঠককে এক নস্টালজিক অনুভূতির ভেতর নিয়ে যায়, যেখানে প্রেম ভাষার তীব্রতা ছাড়িয়ে অনুভবের স্তরে পৌঁছে যায়। শেফালি ফুলের গন্ধ এবং অতলান্তিক স্মৃতির চিত্রকল্প প্রেমের মাধুর্যকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। শেফালির গন্ধ, যা স্নিগ্ধতার প্রতীক, প্রেমের কোমল এবং মায়াময় দিকটি তুলে ধরে।

“অতলান্তিক স্মৃতিতে ক্লান্ত পায়ে যদি কখনও ফিরে আসো!”—এই আহ্বানে এক ধরনের প্রতীক্ষার রেশ রয়েছে। প্রেম এখানে স্থায়ী এবং চিরন্তন; এটি অপেক্ষার এক মহৎ রূপ।

“আকাশের সমস্ত নক্ষত্র ঝরিয়ে দেব অসংখ্য ঝরনাধারার মতো…” এই লাইনে কবি প্রেমকে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে তুলে ধরেন। আকাশের নক্ষত্র ঝরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কবি এক ধরনের অসীম প্রেমের প্রতিশ্রুতি দেন। ঝরনাধারার মতো প্রেম প্রবাহিত হয়, যেখানে নীল রঙের মায়া এবং স্বপ্ন চিত্রিত হয়। এটি প্রেমের একটি পরাবাস্তব অভিব্যক্তি, যেখানে চন্দনের মৃদু ছোঁয়ায় ক্লান্তি মুছে যায় এবং প্রেম নতুন জীবন পায়।

আরও পড়ুন কোরাস: বিভেদের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান

“মুগ্ধ গভীর স্পর্শে হৃদয় বলে, এখানে থামো, আর কোথাও নয়।” এই পঙ্‌ক্তিতে প্রেম এক চূড়ান্ত পরিতৃপ্তি লাভ করে। এটি এমন এক অনুভূতি, যেখানে হৃদয় প্রেমের চেয়ে বেশি কিছু চায় না। এখানে প্রেম শুধু অনুভূতি নয়, এটি জীবনকে পূর্ণতা দেয়।

“কপালের মুকুটে পরিয়ে দেবো তখন স্নিগ্ধতার মণিমুক্তা হীরা!” এই লাইনগুলো প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের গভীরতা এবং স্নিগ্ধতার প্রতীক। প্রেম এখানে অলংকার, যা জীবনকে সৌন্দর্য এবং মহিমা দেয়। ভুলে যাওয়া খারাপ মুহূর্তগুলোর উল্লেখ প্রেমের একটি সহজাত বাস্তবতা। প্রতিটি সম্পর্কেই স্মৃতির কিছু খারাপ, কিছু সুখকর মুহূর্ত থাকে, যা সময়ের স্রোতে হারিয়ে যায়।

“প্রতিটি চুম্বন আর স্বর্গীয় ক্ষীণ স্পর্শে নতুন গল্পের সূচনা হোক…” এই পঙ্‌ক্তিতে কবি প্রেমের নতুন সম্ভাবনার কথা বলেন। প্রতিটি চুম্বন এবং স্পর্শ প্রেমের গল্পে নতুন রং যোগ করে। এটি কেবল অতীতের স্মৃতিচারণ নয়, ভবিষ্যতের এক মহিমাময় স্বপ্ন।

“যেখানে সন্ধ্যার আকাশ প্রতি ক্ষণে মেলে ধরে তার শৈল্পিক মাধুর্য…” সন্ধ্যার আকাশ এবং তার শৈল্পিক মাধুর্য প্রেমের এক নান্দনিক ব্যাখ্যা। এটি প্রকৃতি এবং অনুভূতির মেলবন্ধন। হৃদয়ের প্রতিটি শব্দে বোনা থাকে ভালোবাসার ছোঁয়া, যা অনন্ত এবং অপরিবর্তনীয়।

আরও পড়ুন রাত্রির সাদা ফুল প্রেম: অন্তর্নিহিত আবেগের নৈবেদ্য

কবিতাটি প্রেমকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যায়, যেখানে এটি কেবল অনুভূতি নয়, বরং জীবন এবং প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কবির চিত্রকল্প এবং প্রতীকী ভাষা অসাধারণ। ধূপছায়া সন্ধ্যা, শেফালি ফুল, আকাশের নক্ষত্র এবং চন্দনের ছোঁয়া—এই সমস্ত প্রতীক কবিতার আবেগ এবং সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

কবির ভাষার স্নিগ্ধতা এবং ছন্দময়তা কবিতাটিকে এক শিল্পকর্মে পরিণত করেছে। প্রতিটি স্তবকে প্রেমের এক নতুন রূপ এবং অভিজ্ঞতা প্রকাশ পায়।

কবিতাটি কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের কথা বলে না; এটি মানবিক সম্পর্ক এবং অনুভূতির গভীরতাকে তুলে ধরে। এটি আমাদের ব্যস্ত জীবনে একটি ধূপছায়া সন্ধ্যার মতো থেমে গিয়ে ভাবতে বাধ্য করে—প্রেম, স্মৃতি এবং জীবনের সৌন্দর্য নিয়ে।

মঞ্জুরুল ইসলামের ‘ধূপছায়া সন্ধ্যা’ একটি মনোমুগ্ধকর প্রেমের কবিতা, যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কবিতাটি প্রেমের স্নিগ্ধতা, অনুভূতির গভীরতা এবং জীবনের সৌন্দর্যকে চিত্রিত করে। এটি এমন এক রচনা, যা বারবার পাঠে নতুন অনুভূতি জাগ্রত করে এবং প্রেমের এক চিরন্তন ব্যাখ্যা দেয়।

কবিতা: ধূপছায়া সন্ধ্যা
কবি: মঞ্জুরুল ইসলাম।

ধূপছায়া সন্ধ্যার আবেশে হারিয়েছো নীরব
মুগ্ধতার গভীরে..
যেখানে প্রেম কেবল অনুভবের তীব্র ভাষায়
চিত্রায়ন করা,
এক চিলতে শেফালি ফুলের গন্ধে মিশে
আছো স্নিগ্ধতায়;
অতলান্তিক স্মৃতিতে ক্লান্ত পায়ে যদি কখনও
ফিরে আসো!

আকাশের সমস্ত নক্ষত্র ঝরিয়ে দেব অসংখ্য
ঝর্ণাধারার মতো,
নীল রঙের মায়ায়, সেই চোখের স্বপ্ন এঁকে
দেবো এক নিঃশ্বাসে,
চন্দনের মৃদু ছোঁয়ায় সমস্ত ক্লান্তি মুছে দিতে
চাই এক নিমিষেই,
মুগ্ধ গভীর স্পর্শে হৃদয় বলে, এখানে থামো,
আর কোথাও নয়।

কপালের মুকুটে পরিয়ে দেবো তখন স্নিগ্ধতার
মণিমুক্তা হীরা!
ভুলে যাওয়া দুষ্টু মুহূর্তগুলো হাওয়ায় ভেসে যাক,
কল্পনার রঙে,
প্রতিটি চুম্বন আর স্বর্গীয় ক্ষীণ স্পর্শে নতুন গল্পের সূচনা হোক;
জীবনের প্রতিটি রঙিন মুহূর্তে প্রেমের গল্প লুকিয়ে থাক হৃদয়ে।

যেখানে সন্ধ্যার আকাশ প্রতি ক্ষণে মেলে ধরে
তার শৈল্পিক মাধুর্য;
হৃদয়ের প্রতিটি শব্দে বোনা থাকুক অনন্ত
ভালোবাসার ছোঁয়া।

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর-এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

ধূপছায়া সন্ধ্যা: প্রেমের স্নিগ্ধ রূপমাল্য

Facebook Comments Box

আলতাব হোসেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। তিনি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!