ড. রেবেকা বানু
ড. রেবেকা বানু
অধ্যাপক (অবঃ), ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ,
ফার্মেসী অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
জন্ম: ড. রেবেকা বানু ১৯৫১ সালের ১৮ জুলাই, পিতার কর্মস্থল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত কামারহাট গ্রাম তাঁর পৈতৃক নিবাস।
পারিবারিক জীবন: পিতা বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদদীন, মাতা মিসেস রাবেয়া খাতুন। ড. রেবেকা বানু তাঁদের জ্যেষ্ঠ সন্তান।
তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক ফজলুল করিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০৫ সালে সরকারি তিতুমীর কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ফজলুল করিম সাঅবসর গ্রহণ করেন। তাঁদের দুই পুত্র সন্তান-মেজর রেজওয়ানুল করিম বর্তমানে যশোর ক্যান্টনমেন্টে আছেন ও ড. রেয়াতুল করিম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক।
আরও পড়ুন জ্যোতির্বিজ্ঞানী মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার
শিক্ষাজীবন: ড. রেবেকা বানু শিক্ষা জীবন শুরু করেন পুরানো ঢাকার লক্ষীবাজারের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। ১৯৫৯ সালে কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েন উদদীন কাঁঠালবাগানে নিজের জমিতে দুই রুমের একটা টিনের ঘরে তুলে সবাইকে নিয়ে চলে আসেন। তখন তিনি স্ট্যান্ডার্ড থ্রিতে পরীক্ষা দিয়েছেন। কাঁঠালবাগান আসার পর তেজগাঁ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে বাংলা মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু তার মনে হচ্ছিল সবই যেন পড়ে এসেছেন। বাবাকে একথা বলার পরে, তিনি স্কুলে গিয়ে তাকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করা যায় কিনা বলে অনুরোধ জানালেন। কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করায় বাসার কাছে হাতিরপুলে ধানমন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে টিকাটুলি কামরুনেচ্ছা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর অষ্টম শ্রেণিতে আজিমপুর গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি হন। অষ্টম শ্রেণিতে এই স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে বৃত্তিও পান। ১৯৬৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন এবং ১৯৬৮ সালে এইএসসি পাশ করেন হলিক্রস কলেজ থেকে।
চারিদিকে তখন ‘৬৯ এর গণ আন্দোলনের ঘনঘটা। বাবার ইচ্ছে ছিল ডাক্তারী পড়ানোর, ডাক্তার হয়ে বছরে এক মাস গ্রামের মানুষকে বিনা পয়সায় সেবা দিতে হবে। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে সবাই চিন্তিত হয়ে উঠলেন। ডাক্তারী পড়বার জন্য ঢাকা মেডিকেলে সুযোগও পেলেন। কিন্তু সেখানে তার এক নানী (মিসেস ফাতেমা সিরাজ) শিক্ষকতা করতেন, তখন তিনিও কেন যেন তাকে নিরুৎসাহিত করলেন। দেশের এই পরিস্থিতির কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হওয়াই ঠিক হল। ডাক্তারী পড়তে লাগবে পাঁচ বছর, আর অনার্সে তিন বছর।
আরও পড়ুন ড. এ বি মির্জ্জা মো: আজিজুল ইসলাম
সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগ নতুন চালু হয়েছে। ফার্মেসী বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার স্যারের কাছে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে টিকে গেলেন তিনি। শিক্ষাবর্ষ ১৯৬৮ -১৯৭১, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কারণে ১৯৭২ সালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে, প্রথম শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান অধিকার করে বি ফার্ম (সম্মান) পাশ করেন। এরপর এম-ফার্ম (থিসিস গ্রুপ), দুই পেপার থিওরি পরীক্ষা। এক পেপার পরীক্ষার পর ঘটে গেল নারকীয় মহসীন হল হত্যা। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিস্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৪ সালে থিসিস গ্রুপ থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার এম-ফার্ম পাশ করেন। ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি জুনিয়র স্কলারশিপ (১৯৬৪-৬৫ সাল), রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ (১৯৬৬-৬৭ সাল, এসএসসি), মেরিট স্কলারশিপ (১৯৬৮-৭১ সাল, বি-ফার্ম) ও মেরিট স্কলারশিপ (১৯৭১-৭২ সাল, এম-ফার্ম) এবং কমনওয়েলথ একাডেমিক স্টাফ স্কলারশিপ (১৯৭৭-১৯৮০ সাল, পিএইচডি) লাভ করেন।
আরও পড়ুন কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন
কর্মজীবন: ড. রেবেকা বানু ১৯৭৪ সালের ১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে কমনওয়েলথ একাডেমিক স্টাফ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে পিএইচডি করতে চলে যান। ১৯৮০ সালে পিএইচডি শেষে ফিরে এসে আবার যোগদান করেন। এরপর তিনি ফার্মেসী বিভাগে সহকারী অধ্যাপক (সেপ্টেম্বর ২৯, ১৯৮১ – জানুয়ারি ৮, ১৯৯১ খ্রি.), সহযোগী অধ্যাপক (জানুয়ারি ৯, ১৯৯১ – ফেব্রুয়ারী ৭, ১৯৯৪ খ্রি.) এবং অধ্যাপক (ফেব্রুয়ারি ৮, ১৯৯৪- – -) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একই বিভাগের চেয়ারম্যান (জুলাই ১৬, ১৯৯৬ – জুলাই ১৫, ১৯৯৯ খ্রি.) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ফার্মেসী অনুষদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় নতুন বিভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল কেমেস্ট্রিতে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে এলপিআর শুরু হয়, ২০১৮ সালের জুনে ফার্মাসিউটিক্যাল কেমেস্ট্রি বিভাগ থেকে পূণর্কালীন অবসর গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন অধ্যাপক ডা. রুহুল আবিদ
ড. রেবেকা বানু বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি (বিপিএস), ফার্মেসি গ্রাজুয়েটস অ্যাসোসিয়েশন (পিজিএ) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স (বিএএএস)-এর সদস্য। অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ কমনওয়েলথ স্কলারস ও বাংলাদেশ বায়োকেমিক্যাল সোসাইটির তিনি আজীবন সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ গিয়াস উদ্দিন আহমদ আ/এ কল্যাণ সমিতির তিনি সাবেক সভাপতি।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকায় তাঁর ২৯টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
ঘুরে আসুন “আমাদের সুজানগর” এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে