জাহাঙ্গীর পানু
জন্ম ও পারিবারিক জীবন
কবি জাহাঙ্গীর পানু ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের অন্তর্গত উলাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাসনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ ১লা জানুয়ারি, ১৯৮০ খ্রি.। তাঁর বাবা আলহাজ মো. নুরুল হক মৃধা ছিলেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং মা বেগম নূরজাহান হক ছিলেন একজন গৃহিণী। তাঁর দাদা আলহাজ চাঁদ আলি মৃধা। ছয় ভাই এবং চার বোনের পরিবারে তিনি ভাইদের মধ্যে তৃতীয় এবং ভাইবোনদের মধ্যে সপ্তম। বৈবাহিক জীবনে তিনি স্ত্রী এবং দুই পুত্র সন্তানের জনক।
শিক্ষা জীবন
গাজনার বিলের পলি বিধৌত উর্বর উলাটের গ্রামীণ পরিবেশে বড়ো হয়েছেন তিনি । ছোটোবেলা থেকেই গৃহশিক্ষকের নিকট পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়। উলাট সিদ্দিকীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং একই প্রতিষ্ঠান হতে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দাখিল পরীক্ষায় ১টি লেটারসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাদপুর শাহ মাখদুমিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে আলিম এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাদপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে কর্মজীবনে প্রবেশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নাইট শিফটে ক্লাস করে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
আরও পড়ুন কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও পরিচালক খ ম আবদুল আউয়াল
কর্ম জীবন
বিএসএস পরীক্ষা শেষ করে ফলাফল প্রকাশের আগেই কবি জাহাঙ্গীর পানু ঢাকায় একটি কম্পিউটার ফার্মে বেতনের পাশাপাশি কম্পিউটার শেখানোর শর্তে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে চাকরিতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি গ্রাফিক্স প্রতিষ্ঠান ইন্টার স্পীড, আইএসএল ফার্নিচার, রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডমার্ক গ্রুপ এবং ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডে চাকরি করেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গ্রামে ফিরে ‘উলাট নূরজাহান শিক্ষা নিকেতন’ নামে একটি কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্তমানে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট শাখা খুলেছেন এবং এর ইনচার্জ ও মালিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
লেখালেখি
কবি জাহাঙ্গীর পানু একজন বহুমাত্রিক লেখক, যাঁর লেখালেখির মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তু নেই। তিনি যে সময় যেটি প্রাসঙ্গিক মনে করেন এবং যেটি তাঁকে আকৃষ্ট করে, সেই বিষয়েই লেখেন। মাধ্যমিক থেকে পারিবারিক পরিবেশে সংস্কৃতির চর্চা, বই পড়া, পত্রিকা পড়ার অভ্যাস এবং লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয়। তিনি অনেক কবিতা ও গল্প লিখেছেন, তবে দুর্ভাগ্যবশত এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়নি। তাঁর লেখা বিভিন্ন স্থানীয় ও আঞ্চলিক প্রকাশনায় ছাপা হয়েছে, যেমন ‘গ্রামের দেয়াল পত্রিকা’, পাবনা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক নির্ভর’, ‘ইছামতী’, মাসিক ‘খোলাচোখ’, প্রথম আলোর ‘বন্ধুসভা’ এবং ছদ্মনামে দৈনিক ইত্তেফাকের ‘কন্যা জায়া জননী’তে। জাহাঙ্গীর পানুর কবিতায় কবি জসিম উদ্দিন, আল মাহমুদ এবং রফিক আজাদের প্রভাব সুস্পষ্ট। তাঁর রচনাগুলোর মধ্যে গ্রামীণ জীবনের সৌন্দর্য, সংস্কৃতির বৈচিত্র্য এবং মানুষের অন্তর্নিহিত অনুভূতিগুলো ফুটে ওঠে। এছাড়াও, তিনি নিয়মিত ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনে লেখেন, যেখানে তাঁর বিভিন্ন ধরনের লেখা প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন কবি, লেখক ও পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী
অর্জনসমূহ
কবি জাহাঙ্গীর পানু তাঁর মাধ্যমিক পড়াশোনার সময়ে গ্রাম, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি গান, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা, রচনা প্রতিযোগীতা এবং সাধারণ জ্ঞানে অনেক সাফল্য অর্জন করেন।
ভ্রমণ পিপাসা
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন তিনি। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, রাঙামাটি, সিলেট, বান্দরবন, খুলনা সুন্দরবন, দিনাজপুর রামসাগর, শেরপুর গজনি, কুমিল্লা বার্ড, ময়নামতি, বগুড়া, নওগাঁসহ বাংলাদেশের ৩৬টি জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি ভারতের দার্জিলিং; চীনের কুনমিং-এ মানব আকৃতির স্টোন ফরেস্ট, ২০০০ মিটার ভুগর্ভস্থ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সুড়ঙ্গ, বেইজিং অলিম্পিক স্টেডিয়াম; বিশ্ববিখ্যাত চায়না এ্যাক্রোবায়োটিক শো, তিয়ানজিং শহর ও চীনের প্রাচীর খ্যাত গ্রেট ওয়াল পরিদর্শন করেছেন। সৌদি আরবে বাবা-মাকে নিয়ে মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করে হজব্রত পালন ও ইসলামের ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শন করেছেন।
সমাজ পুনর্গঠনের স্বপ্ন
কবি জাহাঙ্গীর পানু সহিষ্ণু, সুস্থ এবং সংস্কৃতিময় আদর্শিক সমাজ পুনর্গঠনের স্বপ্ন দেখেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, সংস্কৃতির মাধ্যমে সমাজের উন্নতি সম্ভব এবং এজন্য তিনি নিয়মিতভাবে সংস্কৃতিচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তাঁর লেখার মাধ্যমে তিনি সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায় তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন কবি জাহাঙ্গীর পানুর কবিতাসমূহ
ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে