জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী
বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন ইতিহাসখ্যাত এক হিন্দু জমিদার ও প্রখ্যাত শিকারি।
জন্ম: বিজয়গোবিন্দ চৌধুরী আনুমানিক ১৮২৪ সালে, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের তাঁতিবন্দ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম গুরুগোবিন্দ চৌধুরী। তৎকালীন নাটোর কালেক্টরির সেরেস্তাদার উপেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তাঁতিবন্দের জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেও তার উত্তসূরী বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর শাসনামলেই তাঁতিবন্দসহ আশপাশের এলাকায় তাদের জমিদারিত্বের প্রভাব প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়ে।
জমিদারী: অত্যন্ত দক্ষ এবং প্রতিভাবান বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী অতি অল্প সময়ে জমিদারিত্বের হাল ধরে তাঁতিবন্দসহ আশেপাশের এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জমি ক্রয় করে তাঁর জমিদারিত্বের বিস্তৃতি এবং প্রসার ঘটান। মূলত বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর কার্যকালেই তাঁতিবন্দসহ পাবনা জেলার সর্বত্র তাদের জমিদারিত্বের উত্থান ঘটে। তিনি অত্যন্ত কঠোরহস্তে এবং নিয়ম-নীতির ভিত্তিতে তার জমিদারি দরবার পরিচালনা করতেন। তিনি তার শাসন আমলে সামর্থ্যবান প্রজার খাজনা পরিশোধে যেমন বিন্দুমাত্র ছাড় দিতেন না, তেমনি আবার দরিদ্র এবং দুঃস্থ প্রজার হাজার হাজার খাজনা মওকুফ করে দিতেন। তবে তার জমিদারি এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের আচার-অনুষ্ঠানে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। বিশেষ করে মুসলমানরা তার মাটিতে গরু জবাই বা কুরবানি দিতে পারতেন না।
আরও পড়ুন দুলাইয়ের মুসলিম জমিদার আজিম উদ্দিন চৌধুরী
বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী অত্যন্ত সৌখিন জমিদার ছিলেন। তাঁর জমিদারি আমলে তিনি একাধিক হাতি এবং হরিণসহ বিভিন্ন দর্শনীয় পশু-পাখি লালন-পালন করতেন। তবে ব্যয়বহুল হাতি পালনের জন্য প্রজাগণের কাছ থেকে তিনি হস্তীপালন ফি বা বাজে জমা আদায় করতেন। প্রজা সাধারণও আমোদ-উৎসব ভোগ করার জন্য বিনাবাক্য বিনিময়ে বাজে জমা প্রদান করতেন। জমিদার প্রাসাদে থাকা ওই হাতি নাচের পাশাপাশি অনেক সময় হিংস্র জন্তুর আক্রমণ থেকে প্রজাসাধারণের জান-মাল রক্ষার কাজেও ব্যবহৃত হতো।
শিকারি: জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী এলাকায় একজন দক্ষ শিকারি হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি শিকার উপলক্ষ্যে জমিদার দরবার থেকে প্রচুর অর্থও ব্যয় করতেন। বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর শিকার প্রিয়তায় মুগ্ধ হয়ে ভারতের তদানীন্তন বড় লাট লর্ড মেও বাহাদুর তাঁতিবন্দে শিকারের জন্য শুভাগমন করেছিলেন। ওই সময় ভারতে সিপাহী বিদ্রোহকালে বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী ভারতের সরকার বাহাদুরকে সহযোগিতা করায় আস্থাভাজনও হয়েছিলেন। এ কথা জানা যায় তৎকালীন বাংলার গভর্নর ফেডারিকস হেলিডে-এর ১৮৫৭ সালের ৩০ আগস্টে লিখিত একটি পত্র থেকে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তাঁতিবন্দের জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী সিপাহী বিদ্রোহের সময় ঢাকা থেকে পাবনা পর্যন্ত স্থানে বিদ্রোহীদের গতিরোধ করার জন্যে রক্ষক নিযুক্ত করতে চেয়েছেন। তার এ রাজভক্তির জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রশংসনীয় হয়েছেন তিনি। বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী রাজভক্তির ফলে ব্রিটিশ সরকার তাকে বিনা পাশে দুটি কামান ও কয়েকটি বন্দুক রাখার অনুমতি প্রদান করেন। এ সুবিধা তার উত্তরাধিকারগণও লাভ করেন।
আরও পড়ুন সুরেন বাবু
তাঁতিবন্দের স্থানীয় কবি শ্রীমন্তনাথ চৌধুরীর “পরিত্যক্ত পল্লী”কাব্যগ্রন্থে তাঁর প্রশংসাসূচক বাণী শোনা যায়-
পাবনার পরিচয় দেশের গৌরব তুমি
বঙ্গের আদর্শপল্লী বিজয়ের বাসভূমি।
মৃত্যু: জমিদার বিজয়গোবিন্দ চৌধুরী ১৯১০ সালে পরলোকগমন করেন।
তথ্যসূত্র:
১। সুজানগরের ইতিহাস ; লেখক: ড. আশরাফ পিন্টু
আরও পড়ুন-
বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশ পরিচয়
তাঁতিবন্দ জমিদার বাড়ি
ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী