চকখড়ি-উপন্যাস-রিভিউ
উপন্যাস,  বই পর্যালোচনা,  সাগতা,  সাহিত্য,  হাটখালি

চকখড়ি উপন্যাস রিভিউ

চকখড়ি উপন্যাস রিভিউ

 

‘চকখড়ি’ উপন্যাসটি ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে আর্ট ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটির পটভূমি আনন্দ বাগচীর (১৯৩২-২০১২ খ্রি.) জন্মভূমি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নের সাগতা গ্রামকে কেন্দ্র করে। সাগতার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবন অধ্যয়ন ও কর্মজীবনের জন্য কলকাতার কথা এসে গেছ। পঞ্চাশের দশকের কখনো পরিণত পরিণতি, কখনো সুখ-দুঃখের মিশ্রণ, রাজনৈতিক ভাঙা-গড়া, সব হারিয়েও নতুন কিছু পাওয়ার আস্বাদে শীতল রক্তের মানুষের বেঁচে থাকা। আনন্দ বাগচী শৈশবের সেই কলকাতা দেখেছেন এবং তা লিখেছেন ‘চকখড়ি’ উপন্যাসে। এটি তাঁর প্রথম উপন্যাস। প্রচুর ভালোবাসা আর অন্তরঙ্গ জীবনের কথা লিখেছেন। কলকাতাকে যেমন দেখেছেন তেমনই লিখেছেন। দরজায় দরজায় তালা ঝুলছে। মানুষজন শূন্য কলকাতা। ফাঁকা রাস্তাঘাট।অন্ধকারে ডুবে গিয়ে মানুষ, ভীত মানুষ, আলো ভুলে যাওয়া মানুষ, এক অদ্ভুত জীবন।

এই রূপসী মহানগরের আরো এক রূপের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয় এই উপন্যাসে। সেই পর্বের নাম দাঙ্গা, যার অন্য নাম নরহত্যা। লুটতরাজ, লুটের স্বরাজ।
শাসন নেই, শৃঙ্খলা নেই। মানবতা নেই, ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের খুন হওয়া।

লেখকের ‘চকখড়ি ‘ সেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অভ্যস্থ উপলব্ধির একখানা উপন্যাস। তাঁর দেখা চেনা কাছের মানুষেরা এই লেখায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। নৈতিক- অনৈতিক ঘটনাগুলি কখনো সংকটের সৃষ্টি করেছে, আবার তা যথা সময়ে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু জীবনের সহজ পথে চলতে চাইলেই তা সব সময় সম্ভব হয় না।

আরও পড়ুন গল্পগ্রন্থ ‘মায়াকুসুম’ রিভিউ

সামাজিক শাসন, অর্থনৈতিক শাসন সমস্ত মধ্যবিত্ত মানুষকে এক অদ্ভুত নাগপাশে ঘিরে রাখে।
এই উপন্যাসের নায়ক হর্ষ। হর্ষ লেখকের শৈশব। সে অনুভূতিপ্রবণ। অন্যের দুঃখে দুঃখ পায়। সব নারীদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। নারীরাও তাকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা সবার ভাগ্যে জোটে না।

এক শীতের সকাল দিয়ে উপন্যাসের শুরু। গড়গড়িতে কাহিনীর চলমান চাকাতে চরিত্রের পর চরিত্র চলে আসে।পারুলপিসি, মা, ভুঁই মালি, ছোটোকাকা, বন্ধু ইয়াকুব।
বিমলাবৌদি অন্যতম একটি বিশিষ্ট চরিত্র এই উপন্যাসে।বিমলা হর্ষর কাছে বিস্ময়। রূপকথার পাটরাণী। হর্ষ এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করে বিমলার প্রতি।

হর্ষর মণিকাকা এই উপন্যাসের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। ২৫ বছর বয়সে মণিকাকা মারা যাবার পর, হর্ষর মনে এক নিদারুণ বেদনার সৃষ্টি হয়েছিল। এই ভাবে চকখড়ির দাগের উপর দিয়ে স্মৃতির ছোটো গিঁট গুলি খুলতে খুলতে এগিয়ে গেছে এই উপন্যাসে। একটিই কাহিনী, সূক্ষ্ম অনুভূতির ছোঁয়ায় একটি যৌগিক একাগ্রতাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
সে জন্য ‘চকখড়ি’ এক আত্মকথা!

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

চকখড়ি উপন্যাস রিভিউ

Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!