ঘুমিয়ে-আছো
কবিতা,  রমজান আলী খাঁন,  সাহিত্য

ঘুমিয়ে আছ, মফিজ

ঘুমিয়ে আছ

মো. রমজান আলী খাঁন 

এইখানেতে ঘুমিয়ে আছো আমাকে একা ফেলে,
তোমার খোকা কেঁদে শুধু তোমারই কথা বলে।
কেঁদে বলে, বলোনা বাবা কোথায় মা জননী,
দেখে আসি আমার মাকে বলোনা একটু শুনি।

কতোদিন হলো মা জননী বলেনা আমার কথা,
আমি যে খুঁজি আমার মাকে গিয়ে যথাতথা,
খোকার কথার জবাব না দিয়ে চুপ করে বসে থাকি,
তুমিই বলোনা খোকার এভাবে কতদিন দেব ফাঁকি?

গামছা দিয়ে চোখ মুছায়ে আদর করে দেই চুমা,
আদর করে খানা খাওয়ায়ে বলি বাছারে।
তোমার কথা স্মরণ হলে অশ্রুতে ভাসে বুক,
তুমি এমনই স্বার্থপর যেন খুঁজে নিয়েছে সুখ।

যখন তোমাকে এনেছিনু ঘরে ছিলে তুমি এতটুকু,
আদর করে তোমার মায়ে বলতো তোমাকে খুকু।
লাল বেনারসি শাড়ী পড়ায়ে নিয়ে এলাম যবে ঘরে,
এসেই তুমি সংসারটাকে নিলে যে আপন করে।

যখন আমি যেতাম মাঠে গায়ের মেঠোপথ ধরি,
সোনালী ঊষায় সোনামুখ তোমার নিতাম নয়নে ভরি।
ফিরে ফিরে তোমাকে দেখে নিতাম যখন যেতাম মাঠে,
পিছু ডেকে তুমি বলতে আমায় জলদি ফিরো বাটে।

অল্প সময়ে কাজ শেষ করে ফিরে আসতাম বাড়ি,
তুমি বলতে এতো সময় কেমনে থাকো আামায় ছাড়ি।
দেখতে তুমি সোনার প্রতিমা হাসলে সোনা ঝরে,
সেই সোনামুখ না দেখে আমি থাকবো কেমন করে।

হেলেদুলে তুমি বলতে কথা দোল খেতো কানের দুল,
পূবালী হাওয়ায় উড়ে পড়তো মুখে তোমার মাথার চুল।
যখন তোমার কালো কেশ উড়ে পড়তো আমার মুখে,
অতীতের যতো দুঃখ কষ্ট হারিয়ে যেতাম সুখে।

কতকাল তুমি বলোনা আমাকে যাবো বাপের বাড়ি,
এনে দাওনা বাপের বাড়ির খেজুর রসের হাঁড়ি।
বলোনা কতদিন আমাকে দেখতে সুজানগরে যেও,
খেজুর রসের ভিজানো পিঠা পরাণ ভরে খেও।

চির শান্তিতে ঘুমিয়ে আছো আমাকে একা ফেলে,
হাজারো কষ্ট সয়েছো জীবনে আমাকে কওনি খুলে।
আমাকে একা ফেলে নিরালায় কেমনে ঘুমিয়ে থাকো,
একবারও তুমি আমার কথা স্মরণ করলে নাকো।

আমাকে তুমি একা ফেলে চলে গেছো অনেক দূরে,
একবারও এসে দেখে গেলেনা আছি না গেছি মরে।
একবার এসে দেখাতে যদি তোমার সোনা মুখ,
হাজারো কষ্ট বেদনার মাঝে ফিরে পেতাম সুখ।

আরও পড়ুন কবি মো. রমজান আলী খাঁনের কবিতা-
আমি গর্বিত
আহ্বান

 

মফিজ

হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আমার সংসার চলে,
দিনমজুর বলে আমাকে অনেকেই মফিজ বলে।
জঠর জ্বালায় কামলা খাটি,খাটি জীবন ভর,
স্বার্থন্নেসী স্বজন যারা সবাই হয়েছে পর।

সারাদিন ঘাম ঝড়ায়ে করি মনিবের কাম,
হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পাইনা সঠিক দাম।
কাজ বুঝে নিতে মনিব কর্মস্হলেই থাকে,
বেতন দিবার সময় মনিব থাকে ফাঁকে ফাঁকে।

বেঁচে থাকার তাগিদে আমি, রোদ্রে পোড়াই দেহ,
কেমনে আমার জীবন চলে খোঁজ রাখে না কেহ।
হাট বাজারে গরু-ছাগল যেমন বিক্রয় হয়,
মনিবেরা তেমনি আমায় ক্রয় করে নেয়।

দূর দূরান্তে কর্মে গেলে উঠি গাড়ির ছাদে,
লোকে তখন মফিজ বলে আমার পরাণ কাঁদে।
অর্থের অভাবে আমি কর্মস্হলে যাই,
ভালো খাওয়া ভালো পড়া ভাগ্যে জোটে নাই।

জীর্ণ-শীর্ণ দেহ আমার কষ্ট দিয়ে গড়া,
কামলা খাটতে খাটতে আমি হয়েছি আধ মরা।
অভাব অনটনের ভীড়ে খুঁজে পাইনা সুখ,
ধনাঢ্য আত্মীয় যারা আড়াল করে মুখ।

জীবন ভরে সইলাম দারিদ্রতার কষাঘাত,
নিদ্রাহীন চোখে আমার কাটে সারা রাত।
জীবন ভরে করলাম আমি সুখের অন্বেষণ,
সুখ পাখি দিবে কি ধরা থাকতে এ জীবন ?

সিন্দুরী বরুরীয়া, সাগরকান্দি, সুজানগর,পাবনা।

আরও পড়ুন কবিতা-
শরৎ
আমার জন্মভূমি
ভালবাসা সন্তর্পণে

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

ঘুমিয়ে আছ

Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!