গল্পগ্রন্থ ‘মায়াকুসুম’ রিভিউ
গল্পগ্রন্থ ‘মায়াকুসুম’ রিভিউ
আলাউল হোসেন
গীতিকার, সাংবাদিক ও সম্পাদক
সময়টা যে কী ভয়াবহ হয়ে উঠছে আমার কাছে, তা বর্ণনা করার মত নয়। এক সময় সুযোগ না পেলেও পাঠ্য বইয়ের ভেতর লুকিয়ে বই পড়ার চেষ্টা করতাম। তবুও নানা কারণেই খুব বেশি বই পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে যদ্দুর মনে পড়ে পাঠ্য বইয়ের চেয়ে কিছু বেশি গল্প-কবিতার বই পড়েছি। তবে সে অভ্যাসের ইতিও টেনেছি এক যুগের কম নয়। খণ্ড খণ্ড কবিতা বা দুইএকটি গল্প যে এখনও মাঝেমধ্যে পড়ি না তা নয়, তবে পুরো বই পড়ার ঘটনা এক যুগের মধ্যে আমার জীবনে ঘটেনি।
এবারের বইমেলায় বেশ আলোচিত হয়েছে আমাদের অঞ্চলের এক তরুণ লেখকের একটি গল্পগ্রন্থ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বইটি সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। শফিক নহোরের মায়াকুসুম। ঈদের তিন দিন পরে আমার হাতেও এসে পৌঁছেছে বইটি। না কুঁড়ি না ফুল, বেদনার নক্ষত্র, জোনাকি, কুসুমের ভাগ্যরেখা, মৃতবৃক্ষ, অগ্নিকুসুম, ফ্রক, চোখের জল নীল, নীলভোর, মনের দরজা, মুখোশের ফাঁকে- এই ১১টি গল্প দিয়ে সাজানো প্রিয়জন রিঙকু অনিমিখের চমৎকার প্রচ্ছদে মোড়ানো শফিক নহোরের সৃষ্টিকর্ম মায়াকুসুম। অন্যদের চেয়ে সম্ভবত আমার কাছে একটু বেশিই মায়ার। মায়াকুসুমের মায়ায় পড়ে ৫ দিন ধরে পড়ে শেষ করেছি গতকাল রাতে। কিছুদিন অসুস্থতার কারণে বাসার বাইরে যাওয়া হয় না একেবারেই। সারাদিন শুয়ে-বসেও বিরক্ত বোধ করছিলাম। শেষতক হাতে থাকা কয়েকটি নতুন বই পড়তে বসা হলো। যার মধ্যে মায়াকুসুম অন্যতম।
আরও পড়ুন চকখড়ি উপন্যাস রিভিউ
শফিক নহোরের গল্পে একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো- প্রায় প্রতিটি গল্পের ভেতর দিয়ে যে ক্ষােভ, বিদ্বেষ, হতাশা, ঘৃণা উচ্চারিত হয়েছে, সবই এক ধরনের উপমা-ইঙ্গিতের মধ্য দিয়ে। ফলে একদিকে গল্প যেমন গল্প হবার দিকে এগিয়ে গেছে, তেমনি গল্পের মধ্যে এক ধরনের আকর্ষণের জন্ম দিয়েছে। গ্রাম্যজীবনের ক্রমবিকাশ যে চড়াই-উৎরাইয়ের ভেতর দিয়ে ঘটে, তার একটা চমৎকার চিত্রপট অধিকাংশ গল্পের ভেতর সুস্পষ্ট। বিষয়কে কেন্দ্র করে বাক্যের সহজ বুননি গল্পের সৌষ্ঠব বৃদ্ধি করেছে নিঃসন্দেহে।
শফিক নহোর তার সমস্ত পাঠককেই নিয়ে এসেছেন কখনও জয়া-রিপা, রিয়াদ, কুসুম, নুরজাহান- এর কাছে, আবার কখনও মক্তবের হুজুর বা রাসেল মাস্টারদের কাছে। মোহাবিস্টের মতো অনুসরণ করিয়ে শেষ মুহূর্তে ধাক্কা দিয়ে নির্মম জগতের সামনে উপস্থিত করেছেন।
নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত জীবনের গভীরে প্রবেশের ক্ষমতা সব লেখকের ভেতর থাকে না, যা শফিক নহোরের কলমে শতভাগ উপস্থিত। তাই সহজ, সরল অনাবিলভাবে প্রকাশ করেছেন গ্রাম্যজীবনের দুর্জ্ঞেয় রহস্য, না জানতে পাওয়া সেসব ঘটনা-দূর্ঘটনার সামনে পাঠককে বসিয়ে দিয়েছেন শফিক নহোর।
ইদানিং সাহিত্যে নিরীক্ষণ খুব কমন একটি বিষয়; শিল্প-সাহিত্য বা যে কোনো সৃষ্টিকেই স্পষ্টভাবে প্রকাশ করলে তার শিল্পগুণ নাকি থাকে না। খানিকটা সংশয়, খানিকটা কৌতূহল আর খানিকটা অবিশ্বাস নিয়ে পড়তে হয়। কিন্তু আমি মনে করি শফিক নহোরের কৃতিত্ব এখানেই। কোন নিরীক্ষা নয়, কোন দুর্বোধ্য শব্দ-বাক্যের প্রয়োগ নয়. সহজ-সাবলীল ভাষায় মানুষের অব্যক্ত কথার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার প্রতিটি গল্পে।
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
গল্পগ্রন্থ ‘মায়াকুসুম’ রিভিউ