অষ্টাদশী মন, মল্লিক বাড়ির চাঁদ
অষ্টাদশী মন
কুড়ি বছর আগের অষ্টাদশী আমি
চোখে কাজল এঁকে, মুখে তিব্বত স্নো মেখে
বেণী দোলাতে দোলাতে শ্যামলীদির বাগানে যেতাম।
বাগানের বকুল, বেলী, কামিনী,
হাসনাহেনার মন মাতানো সৌরভ আমায় আচ্ছন্ন করত,
মন চাইতো রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াই
ফুলে ফুলে আকাশের নীলে;
ভালোবাসার পংক্তি সাজাতে সাজাতে
কখন যেনো পাড়াগাঁয়ের নদী হয়ে যেতাম
শান্ত জলে সাঁতার কাটতো ইচ্ছের শাদা শাদা পাতিহাঁস,
পানকৌড়ির মতো চুপচুপ ডুব দিতো সত্তার অজানা অনুভূতি;
কখনো বা হয়ে যেতাম ফুল পাতার মায়াময় অরণ্য।
মনের গোপন গহীনে আজও অষ্টাদশী আমি আর শ্যামলীদির সুবাসিত বাগান।
ইদানীং সৌখিন সুখগুলো ঝুলবারান্দায় ফুটতে দেখি
কাগজের ফুলের মতো গন্ধহীন,অনুভূতিহীন।
নাগরিক কোলাহলে শুধুই অস্থিরতা,প্রগাঢ় শূন্যতা
বিস্মৃতির অতল থেকে স্মৃতির পরাগ মাখি
ডুবে যাই গহীনের আমিতে।
শ্যামলীদি,অষ্টাদশী মন আজও তোমার বাগান খোঁজে!
আরও পড়ুন কবি পূর্ণিমা হকে কবিতা-
হৃদয়পটে
ভেতরবাড়ীর মাঠ
সম্পর্ক
মল্লিক বাড়ির চাঁদ
আমাদের একটা বাড়ি ছিলো
বাড়ি বলতে ছাউনিহীন দো’চালা একটি ছনের ঘর,
নড়বড়ে একটা চৌকি-
অভাবের হাজারো ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির জল এসে ভিজিয়ে দিতো জরাজীর্ণ সংসার।
সারাদিন ঘাম ঝরিয়ে
বাবা ক্লান্ত দেহে যৎসামান্য চালডাল নিয়ে বাড়ি ফিরতেন,
কোনোদিন বা খালি হাতেই
মা ছেঁড়া আঁচলে চোখের জল মুছে হেঁসেলে আগুন জ্বেলে অপেক্ষা করতেন।
চালের ফুটো দিয়ে আমরা চাঁদ দেখতাম, তারা গুনতাম
আকাশের বিশালত্বে জমা রাখতাম মনের আশাময় গল্প-
শুক্লপক্ষের জোছনা এসে আমাদের কাঙাল মুখগুলো ঝলমলিয়ে দিতো।
আমাদের কাছে ভালো খাবার বলতে ছিলো সাদা সাদা ভাত
খুব বেশি হলে জুটতো
পানির মতো পাতলা ডাল।
শুনেছি মল্লিক বাড়িতে নাকি প্রাতরাশে ঘিয়ে ভাজা পরোটা হয়,
রোজ রাতে আমাদের কাছে চাঁদটাকে পরোটার মতো মনে হতো
আমরা প্রতিরাতে চাঁদ খেতাম
আর আয়েশী ঢেকুর তুলতাম,
চোখে-মুখে ছিল কল্পিত ভোজের আনন্দ।
একরাতে আমাদের আকাশ থেকে
চাঁদটাও চুরি হয়ে গেলো!
অভুক্ত পেটে খুঁজতে খুঁজতে জানতে পারলাম,
সে নাকি মল্লিক বাড়ির ছাদবাগানে জোছনা বিলায়।
আমরা এখন আঁধার খাওয়ার অভিনব অভ্যেসে অভ্যস্ত।
আরও পড়ুন কবিতা-
প্রার্থনা
রহস্যের সন্ধান
লাল সূর্যটা নাও
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
অষ্টাদশী মন