অধরা চাঁদ উপন্যাস রিভিউ
অধরা চাঁদ উপন্যাস রিভিউ
মানব জীবন ফুলের মতো। তবুও সব ফুলের সৌরভ সবাই গ্রহণ করতে পারে না। জীবন সহজ হলেও অদৃশ্য কিছু কূটিল মানুষের জন্য, সেই জীবন বাস করার অযোগ্য হয়ে পরে। বিয়োগ বেদনায় কেউ কেউ স্বস্তি পায়। মানব জনম বড়ই বিচিত্র। নিজের পাশেই হয়তো অতি প্রিয় মানুষটি থাকে। অন্তর চক্ষু দিয়ে তাকে দেখা হয় না । জীবন ও জীবনবোধের গল্প নিয়েই তরুণ লেখিকা শাহানাজ মিজান সহজ সাবলীল ভাষায় তার দেখা জীবনকে কিছু শব্দ দিয়ে বুনেছেন এক বিচিত্র মানব জীবন।
উপন্যাসে প্রধানত সমাজ জীবন প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সামাজিক সমস্যাসমূহও এতে প্রধান হয়ে ওঠেছে।
উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখিকা প্রাণ খুলে তার মতামত লিপিবদ্ধ করতে পেরেছেন। চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পেরেছেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে।
আরও পড়ুন সরদার জয়েনউদদীনের গল্পগ্রন্থ নয়ান ঢুলী রিভিউ
শালুক কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে গ্রামের সহজ সরল মেয়ে। অভাব-অনাটন ও দুঃখবোধের একটি জায়গা থেকে, সামাজিক অপবাদ নিজের মাথায় নিয়ে সাহস দেখিয়ে, সে এক বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করত। একজন বয়স্ক পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজের জীবনের সঙ্গী হিসেবে, তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। গল্পের ভেতরে গল্প এসে থেমে গেছে নতুন এক গল্পের খেয়াঘাটে।
‘নারী পুরুষের শরীরের প্রয়োজন মেটানো ছাড়া এখানে ভালোলাগা বা ভালোবাসা বলে কিছু ছিল না।’
অভিমান হতে হতে একটা সময় নিজের মনের ভেতর বিষবৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে গিয়েছে, চলে যাওয়ার একটা তাড়া থেকে। হয়তো জীবনকে সেভাবে দেখা হয় না, যেভাবে একজন পুরুষ তার সঙ্গীর কাছ থেকে ভালোবাসা ও আবেগ আশা করে। কুটিল মানুষের ভিড়ে ভালোবাসা তখন হয়ে ওঠে সত্যিকারের বিষবৃক্ষ । সামাজিক ও আঞ্চলিক শব্দ মিশিয়ে পাঠকের সামনে একটি উপন্যাস তুলে দিয়েছেন লেখিকা ।
সমাজে গেদু মণ্ডলের মত বদজাত মানুষের আজকাল অভাব নেই। কারো কারো ঘরের ভেতরে লুকিয়ে থাকে অদৃশ্য কালসাপ। সমাজের পচে যাওয়া গলে যাওয়া মানুষের জীবনের গল্পকে সাবলীল বর্ণনায় লিপিবদ্ধ করা বড়ই কঠিন। তবুও জীবনের নিয়মে জীবন চলমান। প্রেমের আসলে কোন বয়স নেই। যে কেউ যে কোন বয়সে নতুন করে প্রেমে পড়তে পারে, সংসার করতে পারে। এখানে বয়স যে কোন ব্যাপার না লেখিকা সেদিকে বেশ নজর দিয়েছেন।
আরও পড়ুন আমাদের সুজানগর সাহিত্য সংকলন রিভিউ
অবসর প্রাপ্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তার জীবনে প্রেম এভাবে ধরা দেবে, সে নিজেই বিশ্বাস করতে পারেনি।
তার নিজের জীবনেও বিয়োগ বেদনা কম ছিলো না । তার নিজের ভেতর থেকে একটি আপসোস প্রকাশিত হয়েছে! তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর যখন নতুন করে শালুককে নববধূ রূপে গ্রহণ করে।
‘এই পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষ, তার নিজস্ব পৃথিবীতে একা । নিঃসঙ্গ। প্রত্যেক মানুষের কিছু অপূর্ণতা রয়েই যায়। যা কোনো কিছু দিয়েই পরিপূর্ণতা পাওয়া যায় না।’
লেখিকা অনেক গুলো চরিত্র একসাথে নিয়ে এসেছেন। এজন্য পড়তে গেলে প্রথম দিকে পাঠক একটু বিরক্ত হতে পারে । খুব দ্রুত বিয়ে, নতুন ঘরে বাচ্চা এবং অনেকগুলো বাচ্চা নেওয়াটা একটু অর্ড লাগছে।
আমি মিয়া মানুষ কতো খারাপ, আজ তা দেখাই দেব। শয়তান, বদমাইশ, একটা নেশাখোর, জুয়াখোর…। এহন লম্বা লম্বা দাঁড়ি রাহিছেও। লম্বা জুব্বা পড়ো। নামাজ পড়ি-কপালে দাগ ফেলাইছেও। শুনলাম মসজিদে আযান দিয়ি, বাড়ি বাড়ি মুষ্টির চাল তুলি খাও। ভেতরের মানুষটারে তো বদলাও নাই। এতো বছর মিয়াডার দেখবির আইছেও। অথচ ভালো মনে আসো নাই। মনের মধ্যি কালিভরি আনিছও…
সব প্রশ্নের উত্তর সবাই দিতে পারে না। মানব জীবন সত্যি বড়ই বিচিত্র। তবুও সুন্দর যদি তাকে অন্তর থেকে ভালোবাসা যায় সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে দেখা যায়।
জীবন ও পেছনের গল্পের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যায়, মধুময় যৌবনের রঙিন ঘুড়ি। সুতো কাটা সে ঘুড়ির পেছনে আমরা দৌড়ে যেতে থাকি।
আরও পড়ুন মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের তারা পরিচিতি রিভিউ
অধরা চাঁদ একটি সামাজিক উপন্যাস। এর ভেতরে আছে দুঃখ, কষ্ট, ব্যথা, বেদনা, পাওয়া না পাওয়ার গল্প। খুব সহজে যা দেখা যায় তা আসলে দেখা নয়। একটু সহজ করে সুন্দর করে দেখলে প্রেম বেঁচে থাকে পরম মমতায় ।
বই: অধরা চাঁদ
লেখিকা: শাহানাজ মিজান
প্রথম প্রকাশ:মার্চ-২০২১ খ্রি.
প্রচ্ছদ: মাহী মজুমদার
প্রকাশক: বাংলানামা
মলাট মূল্য: ২৪০৳
৫ ফর্মা
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
অধরা চাঁদ উপন্যাস রিভিউ