-
পক্ষিরাজের ডানা (শেষ পর্ব)
পক্ষিরাজের ডানা (শেষ পর্ব) সাইফুর রহমান রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর উঠলো জানে আলমের শরীরে। রাত যত গভীর হতে লাগলো, জ্বরও ততটাই প্রকট আকার ধারণ করতে লাগলো। সকাল বেলা দেখা গেল জ্বরের প্রকোপে জানে আলম সজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। মাজেদ শেখ ছেলের শরীরে হাত দিয়ে দেখলেন ভয়ানক তাপে শরীর যেন একেবারে পুড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন এই উত্তাপে খৈ, মুড়ি ভেজে নেওয়া যায় অনায়াসে। পাশ থেকে জুলেখা বিবি মাজেদ শেখকে উদ্দেশ্য করে আর্তনাদ করে বললেন, _দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া তামশা না দেইখে টপ কইরে ডাক্তার ডাইকে নিয়ে আসেন। জ্বরে ছেলেডার সারা শরীর পুইড়ে যাচ্ছে। মাজেদ শেখ ছুটলেন ডাক্তারের খোঁজে। হাতেম…
-
পক্ষিরাজের ডানা (৩য় পর্ব)
পক্ষিরাজের ডানা (৩য় পর্ব) সাইফুর রহমান পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকদিন পর যথারীতি রেজাল্ট বেরুলো। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেল জানে আলম শুধুমাত্র বাংলা ছাড়া আর সবগুলো বিষয়েই ফেল করেছে। স্কুলের হেড মাষ্টার আবুল কাশেম জানে আলমের বাবা মাজেদ শেখকে স্কুলে ডেকে পাঠালেন। তাকে উদ্দেশ্য করে ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, __ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দিকে নজর দিতে পারো না তো ওদের স্কুলে পাঠাও কেন মাজেদ মিয়া। ক্ষেত খামারে কাজে লাগালেও তো এর চেয়ে বেশি লাভবান হতে। কথাগুলো যে প্রধান শিক্ষক বিদ্রুপাত্মক সুরে বলছেন মাজেদ শেখের সেটাও সম্ভবত মাথায় ঢোকে না। __ঠিকই কয়ছেন মাষ্টার সাব। আমিও তাই ভাবতিছি ওক আমি মাটেই লাগা দেবো।…
-
পক্ষিরাজের ডানা (২য় পর্ব)
পক্ষিরাজের ডানা (২য় পর্ব) সাইফুর রহমান পূর্ব-দক্ষিণ কোণে কুচকুচে কালো মেঘ। ভাবে মনে হচ্ছে বড় ধরনের ঝড় আসবে শীঘ্রই। এক পাল সাদা বক পূর্ব দিক থেকে উড়ে যায় পশ্চিমে। পূর্বদিকের কোন অঞ্চলে হয়তো ইতোমধ্যে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। আর সেজন্য পাখ-পাখিরা দল বেঁধে সব পালিয়ে যাচ্ছে নিরাপদ কোনো আশ্রয়ে। আসন্ন বিপদের আঁচ পেয়ে গরুগুলোকে নিয়ে জানে আলম বাড়ির পথে পা চালায় দ্রুত। জানে আলম তার গরুগুলোকে উঠোনের শেষ প্রান্তে খড়ের গাদার পাশে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেয় শক্ত করে। বাড়ির ভেতর থেকে জানে আলমের বাবা মাজেদ শেখ চিৎকার করে ওঠে “তোর কি কোন জ্ঞান কাণ্ড নেইরে আলম, গরু গুলেক…
-
পক্ষিরাজের ডানা (১ম পর্ব)
পক্ষিরাজের ডানা (১ম পর্ব) সাইফুর রহমান চৈত্র মাস প্রায় শেষের দিকে। সুজানগরের গাজনার বিলের বিস্তীর্ণ নাবাল অঞ্চল এ সময়টাতে সাহারা মরুভূমির মত শুষ্ক ও উষ্ণ। অথচ ভরা বর্ষায় এই গাজনা বিলের প্রমত্ত উত্তাল ঢেউ ও জলরাশি দেখে কেউ হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে, গ্রীষ্মে এই বিলের কী এক করুণ পরণতি দৃশ্যমান হয়। যদিও চৈত্র-বৈশাখের খরতাপে অনেক প্রান্তিক কৃষক গভীর নলকূপ গেঁড়ে বোরো ধান জন্মানোর জন্যে সেচ ব্যবস্থাটি চালু রাখেন। কিন্তু তারপরও পেঁয়াজ ও অন্যান্য রবি শষ্যের জমিগুলো বেশিরভাগই বিরান, আবাদহীন ও পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে থাকে বর্ষা নামার পূর্ব পর্যন্ত। তবে এটা দেখে আশান্বিত হতে হয় যে বিরান এই…