-
প্রজ্বলিত স্মৃতি
প্রজ্বলিত স্মৃতি জাহাঙ্গীর পানু আজ এই পড়ন্ত অবেলায় কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করি কোথাও কী একটু অবসর ছিল না? একান্তে নিজেকে জানিবার, বুঝিবার। এইতো সেদিন – গোলাপের পাপড়ি আর শিউলি ফুলের মালা হাতে নিয়ে এসে বলেছিল- “প্রিয়তমেসু, অল্প সময়ের জীবনে আমাদের চাওয়াগুলো অফুরন্ত, নিটোল। জানি তোমাকে পাব না! কিন্তু আজ এই পড়ন্ত বিকেলে নীলাকাশকে স্বাক্ষী রেখে বলে গেলুম, তোমাকে জীবনে হারাতেও চাই না আমি রব নিরবে তোমার শয়নে, স্বপনে, তোমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে।” শাব্দিক কথা শেষ হয়েছিল পুস্পিতার । কিন্তু! তার প্রতিটি নিশ্বাসের হা-হুতাশের উচ্চারিত বাক্যগুলো ছিল খুবই স্পষ্ট এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তার কথার গভীরতা সেদিন বুঝিনি। কিন্ত আজ…
-
তুমি কাঁদিতেছ কেন, অযাচিত অহমিকা
তুমি কাঁদিতেছ কেন? জাহাঙ্গীর পানু শীতকালে এমন বৃষ্টি দেখিনি কখনো! ব্যথিত হৃদয়ে তুমি কাঁদিতেছ কেন? নেই বৈশাখের ইশান কোণের নিকষ কালো মেঘ নেই আষাঢ়ের কালো মেঘের ঘনঘটা তবে কেন তোমার চোখে ঝরছে বারিধারা। হঠাৎ সঙ্গীহারা কোনো যুবতীর আর্তনাদের মতো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ নীড়হারা আশ্রয়হীন পাখির মতো যেমন কাঁদে ব্যর্থ প্রেমিকের বিধ্বস্ত হৃদয় ; অনেক জমানো কথা না বলার অভিযোগে- আশাহত পৌষ তুমি কাঁদিতেছ কেন? নেই নদীর উত্তাল তরঙ্গের প্রথাগত আস্ফালন নেই শ্রাবণের বিরামহীন বারিধারার প্রচণ্ড ঢল নেই নদী স্রোতের তোরে নদীভাঙা কোনো জনপদ তবে কেনো নদীগর্ভে সব হারানো রমণীর মতো- নির্লীপ্ত মাঘ তুমি কাঁদিতেছ কেন? নেই দখলদার কোনো রাজার রক্তচক্ষুর…
-
বেকারত্ব, বনের পশু, ধূসর স্মৃতি
বেকারত্ব জাহাঙ্গীর পানু বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে হেঁটে চলছে ফুটপাত ধরে দমকা হাওয়ায় উড়ে উস্কো খুস্ক মাথার চুল লোকাল বাসের ভাড়া মিটিয়ে চলছে হেটে দিতে হবে মৌখিক পরীক্ষা অনেকদিন ধরে শুধু ইন্টারভিউ দিয়ে চলেছে গ্রামের অজপাড়াগাঁয়ের বেকার ছেলেটি কিন্তু সরকারি চাকুরীতো দূরের কথা কোনো বেসরকারি চাকুরীও ভাগ্যে জোটে না। শরীরের ঘামে অনার্স প্রথম বর্ষে বাবার কিনে দেয়া হাত ঘড়িটা কেমন যেনো কালচে হয়ে গেছে। অনেকদিন হলো একজোড়া নতুন জুতা কেনা হয় না; একপাশে ক্ষয়ে গেছে, দ্রুত হাঁটতে গেলে অনেক অসুবিধা হয়। বাড়িতে অসুস্থ বাবা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে ছেলের ভালো একটা চাকুরী হবে, ছোট বোনের বিয়ের বয়স হয়েছে মা বলেছে,…
-
অন্ধকারের জ্যোতি, যখন সন্ধ্যা আসন্ন, ক্ষতচিহ্ন
অন্ধকারের জ্যোতি জাহাঙ্গীর পানু নিকষ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত ধরণী অসভ্য মানবতা ধ্বংস সামাজিক রীতি। চারিদিকে হত্যাযজ্ঞ নেই মানবিক গুণাবলী বহু ঈশ্বর বিভক্তিতে জ্বলছে পূজার দীপালি। আদিকালের আবাসভূমি মূল্যহীন মান সৃষ্টিতত্ত্বের শিকড় মূল ইবরাহিমের দান। স্বীয় পুত্রের পদাঘাতে বইলো ঝর্ণাধারা অনুর্বর বাক্কা হলো সজিবতায় ভরা। মধ্যগগণে উঠলো চাঁদ স্নিগ্ধ হলো ধরিত্রী অন্ধকার কেটে গেলো সভ্য সমাজ রীতি। হস্তে তব ঐশীবাণী হবে না পথ বিচ্যুতি মানবতার মুক্তির বাহক অন্ধকারের জ্যোতি। আরও পড়ুন কবি জাহাঙ্গীর পানুর কবিতা- শ্বাশত বাণী বেকারত্ব যখন সন্ধ্যা আসন্ন অস্তগামী সূর্যের লালিমার রক্তিম আভার আলোকছটা পেরিয়ে পৃথিবীর বুকে নামে সন্ধ্যা। পাখির কিচিরমিচির কলকাকলি থেমে আসে ফিরে চলে…
-
শূন্য তরী, বিচ্ছিন্ন পঙক্তিমালা, স্বপ্ন সারথি, ইচ্ছে ঘুড়ি
শূন্য তরী জাহাঙ্গীর পানু যাচ্ছে সময় যাচ্ছে দিন মাস পেরিয়ে বছর যায় ভালবাসার শূন্য তরী একলা হাতে বৈঠা বায়। কাল যে মনে রাধার বাস আজ সে মনে সর্বনাশ কৃষ্ণ ডাকে বাশির সুরে দুপুর বেলার তপ্ত রোদে। ফাগুন হাওয়া থমকে যায় কোকিলের সুর বিহনে নদীর বুকে ঢেউ থেমে যায় অবাক চেয়ে দূর গগণে। দেখবো না আর চাঁদের হাসি শরতের নিশিত রাতে। জীবনে আর ফুটবে না ফুল ফাগুনের কোনো প্রাতে। বিচ্ছিন্ন পঙক্তিমালা গভীর রাতে অন্ধকারে পথচলার বাতি বন্ধুর পথে ছুটে যাওয়া জীবন চলার সাথি। চলেছি পথে একলা মনে তুমিও কিন্তু তাই। সুযোগ পেয়ে সেদিন কেনো করেছিলে বড়াই? এক তরীতে ভাসবো…
-
শ্বাশত বাণী, স্রষ্টার লীলাশৈলী, সৌখিন কবি
শ্বাশত বাণী জাহাঙ্গীর পানু পৃথিবী নিমজ্জিত ছিল আচ্ছন্ন অন্ধকারে। বিপন্ন মানবতা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মরু প্রান্তর পাহাড় বেষ্টিত কা’বার চত্বরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ মদ, জুয়া ও নারীর প্রতি আসক্তিতে নৈতিক স্খলন আন্তঃগোত্রীয় কলহপূর্ণ সামাজিক অবক্ষয়। আসিল নতুন সুর্য সাথে নিয়ে স্রষ্টার অমিয় বাণী। পাঠে তার হৃদয় হয় বিহ্বলিত, সুরের মুর্চ্ছনায় আচ্ছন্ন হয় গোটা সৃষ্টিকুল। নিবিষ্ট চিত্তে শ্রবণে সমস্ত মানব জাতি পায় আত্মতুষ্টি পথহারা পাখি ফিরে পায় তার আপন নীড়ের ঠিকানা বিজ্ঞানীরা গবেষণায় খুঁজে পায় নতুন আবিস্কারের সূত্র আউলিয়ারা পায় তাঁদের মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য। সাধারণ মানবকূল জীবন যাপনে পায় সহজ সরল পথ নশ্বর পৃথিবীর কোলাহলপূর্ণ, মিছে মায়া শেষে যে পথ তাকে নিয়ে যাবে-…
-
স্বপ্ন ও স্বাধীনতা, অস্পৃশ্য স্বপ্ন, বাংলার কৃষক
স্বপ্ন ও স্বাধীনতা জাহাঙ্গীর পানু আমার স্বপ্ন দেখা স্বাধীনতাকে ঘিরে অবারিত দিগন্ত জোড়া সবুজ ধানক্ষেতে মৃদু হাওয়ায় দোল খাওয়া পাখির কলকাকলীতে কেটে যায় ভোর স্রোতস্বিনী পদ্মার কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দেখা ঢেউ বয়ে যাওয়া ফাগুনের গাছের ডালে গজানো কচি পাতার নিঃশব্দে বেড়ে ওঠা, আনন্দে উদ্বেলিত বিকেলের সবুজ প্রান্তরে শিশু কিশোরের ছোটাছুটি, সকালে পূব আকাশে সোনালী রঙে উদিত হওয়া রুপালী রবি। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ঝলমলে শ্রাবণের কুমারী নদী। আমার স্বপ্ন বুনন স্বাধীনতাকে নিয়ে ইচ্ছের স্বপ্নেরা যেন থমকে না যায় পথহারা পাখিদের ভিড়ে, মানবিক মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য জীবন যাবে না অন্যের পানে চেয়ে। নারীর সম্ভ্রম যেন না যায় অন্যের লালায়িত জিঘাংসা…
-
স্বাধীনতার সাধ, আমার যতো ভালবাসার ঋণ
স্বাধীনতার সাধ জাহাঙ্গীর পানু ফুলের সাথে পাখীর সাথে করবো আমি প্রীতি নদীর মাঝির ভাটিয়ালি সুরে শুনবো আমি গীতি। চাঁদনী রাতে জোস্না মেখে তারার পানে চেয়ে রহস্য ঘেরা সপ্ত আকাশ দেখবো অবাক হয়ে। সবুজে ঘেরা বনভূমিতে নানান পশুর মেলা বন বাদারে তাদের সাথে করবো আমি খেলা। নদীর বুকে ভাসবো আমি বানিয়ে কাঠের ভেলা। পাতাল পুরি দেখবো সেথা করবো না আর হেলা। মেঘ হয়ে ভাসবো আমি নীল আকাশের পানে পাখির চোখে দেখবো আমি বিশ্ব জগৎ টাকে। পাখির বেশে আকাশ পানে উড়বো সবার আগে ইচ্ছে মতো স্বাধীনতার সাধ যে মনে জাগে। আমার যতো ভালবাসার ঋণ বার…
-
তুমি যদি চাও
তুমি যদি চাও জাহাঙ্গীর পানু হরিণ নয়না আঁখি তোমার আর মেঘবরণ চুল স্বচ্ছ কালো দীঘির জলের ফোটা পদ্ম ফুল, মেঘবরণ কালো কেশে দিয়ে রাঙা বুনোফুল কর্ণে তোমার শোভা পাবে ঘাসফুলের দুল। যদি চাও, গভীর রাতে নির্জন দ্বীপে প্রদীপ হাতে যাবো ঝিনুক কুড়ে মুক্তো এনে তোমার হাতে দিবো, রঙধনুর সাত রঙের মালা গলায় পড়াবো আকাশ থেকে তারা এনে কপাল সাজাবো। যদি চাও অথৈ সাগর পাড়ি দিয়ে বাণিজ্যিতে যাবো হিরা-মানিক জহরতের গহনা এনে দেবো কৃঞ্চচূড়ার রঙে তোমার হাতটি রাঙাবো চন্দ্র হতে জোছনা চেয়ে তোমাকে দিবো। তুমি চাইলে, নিশাচর পাখি হয়ে তোমার পানে রবো প্রভাত ফেরীর পাখি হয়ে ঘুম ভাঙাবো, হেমন্তের সোনাঝরা…
-
শিকড়ের আঘাত
শিকড়ের আঘাত জাহাঙ্গীর পানু জীবনের বন্ধুর পথে নিরন্তর হেটে চলা মসৃণ কুসুমাস্তীর্ণ পথ খুঁজে পাইনি কখনো, জীবন চলার প্রতিটি বাঁকে প্রতিবন্ধকতা ঠেলে ; দ্বিধাহীন চিত্তে সম্মুখ পানে ছুটে চলার আপ্রাণ চেষ্টা। ক্ষুরধার পরিবার, সমাজের তীর্যক বাণী আর সহযোগিতার উদার হস্তের বৈপরীত্যে পশ্চাতে টেনে ধরার অসহিষ্ণু সমাজের সহজাত প্রবৃত্তিকে দু’পায়ে মাড়িয়ে সম্মুখপ্রকোষ্ঠে এগিয়ে চলা। এ যেন শিকারীর তীরের আঘাতে, আহত পাখির বেঁচে থাকার অভিপ্রায়ে ডানা ঝাঁপটিয়ে উড়ে যাওয়ার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। মম গহীন হৃদয়ের আপ্লূত কান্নার নিঃশব্দের প্রতিটি অনুভূতিকে করেছি জীবন পরিক্রমার এক একটি উপদেশময় স্তবক। আপন শিকড়ের আঘাতে জর্জরিত ব্যথিত অন্তরের বেদনা ক্লিষ্ট কষ্টকে বানিয়েছি রত্ন শোভিত তরণী ; যেথায়…