-
তাজমহলের শহর আগ্রায়
তাজমহলের শহর আগ্রায় তাহমিনা খাতুন মোগল সম্রাট শাহজাহানের অমর সৃষ্টি পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের এক আশ্চর্য আগ্রার তাজমহল! শত শত বছর ধরে অতুলনীয় এই সৌন্দর্য শোভা নিজের চোখে একবার দেখার জন্য পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ বিস্ময়কর এই সমাধি সৌধ স্থলে ছুটে যায়। সাত আশ্চর্যের একটা আশ্চর্য দেখতে পাওয়া তো বিরল এক সৌভাগ্যের ব্যাপার বৈকি। সেই বিরল সৌভাগ্যের ভাগীদার হওয়ার সুযোগ পাওয়া গেল। দিল্লী থেকে আগ্রার দূরত্ব ২৪৩ কিলোমিটার। সড়ক পথে ঐতিহাসিক এই শহরে পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে চার ঘন্টার মতো। জুলাই মাসের এক ভোরে মাইক্রোবাসে দিল্লী থেকে আগ্রা যাত্রা শুরু করলাম। দিল্লী থেকে আগ্রার যাত্রা পথে আরও এক ঐতিহাসিক ঐতিহাসিক…
-
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (শেষ পর্ব)
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (শেষ পর্ব) তাহমিনা খাতুন রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষমতাধর সম্রাটদের পতনের পর সাম্রাজ্যের ক্ষমতা চলে যায় চার্চের বা গির্জার হাতে এবং কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত গির্জার মাধ্যমেই রোমান সাম্রাজ্য পরিচালিত হতে থাকে। রেঁনেসাসের শুরু থেকে প্রায় সব পোপই রোম শহরটিকে শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। রেঁনেসাস স্থপতিরা রোমকে তাঁদের স্থাপত্য কর্মের কেন্দ্রে পরিণত করেন এবং শহরটি জুড়ে শ্রেষ্ঠ সব শিল্প কর্ম তৈরি করেন। রোম ১৮৭১ সালে ইতালিয় রাজ্যের এবং ১৯৪৬ সালে স্বাধীন ইতালির রাজধানী হয়। রোমের সব প্রাচীন স্থাপনাই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ‘ভ্যাটিক্যান সিটি’ বা পোপের দেশ! এক দেশের অভ্যন্তরে আরেক দেশ! বিশাল…
-
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (৩য় পর্ব)
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (৩য় পর্ব) তাহমিনা খাতুন রোম পর্যায়ক্রমে রোমান রাজ্য, রোমান প্রজাতন্ত্র এবং রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। টাইবার নদীর তীরে রোম। সাতটি পর্বত দিয়ে বেষ্টিত। প্রথম দিকে রোমান সভ্যতা গ্রীক সভ্যতার মতোই অনেকগুলো নগর রাষ্ট্রের সমষ্টি বা কনফেডারেশন ছিল, যার নাম ছিল ‘রিপাবলিকা বা প্রজাতন্ত্র’। সিনেটর বা জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শে রোম পরিচালিত হতো। রোম প্রজাতন্ত্রের স্থায়িত্বকাল ছিল পাঁচ শত বছর আর রাজতন্ত্র স্থায়ী হয়েছিল পনের শত বছর! এই দুই হাজার বছর মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এর প্রভাব এবং ফলাফল আইনী ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অদ্যাবধি অনেক কিছুতে রয়ে গেছে। ‘রোমান জাতি’ বসবাস করার কারণে…
-
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (২য় পর্ব)
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (২য় পর্ব) তাহমিনা খাতুন ‘পালাজ্জো ডুকেল’ (Palazzo ducale) বা ডজের প্রাসাদ মার্কস স্কোয়ারের আরেক অনবদ্য সুন্দর স্থাপত্য। এটি ভেনিসের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সুন্দর প্রাসাদগুলোর একটি। গথিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন এই পালাজ্জো ডুকেল। পালাজ্জো ডুকেল ছিলো ডজের বাসভবন। ডজ ছিলেন ভেনিসের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারা আজীবনের জন্য নির্বাচিত নেতা এবং ম্যাজিষ্ট্রট। ৭২৬-১৭২৭ শতাব্দী পর্যন্ত ডজ এর শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এই ব্যবস্থা কোন রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল না, ছিল রীতিমতো গণতান্ত্রিক। ডজের প্রাসাদের বাইরের দেয়াল স্বর্ণ এবং বহুমূল্য রত্ন খচিত! এই প্রাসাদের সাদা মার্বেল পাথরের থামের মাঝে রয়েছে দুটি গোলাপি রঙের থাম। এখান থেকেই ডুকেল অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড…
-
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (১ম পর্ব)
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (১ম পর্ব) তাহমিনা খাতুন ইতালি। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাজার হাজার বছরের এক প্রাচীন সভ্যতা, যার পাতায় পাতায় জড়িয়ে আছে জুলিয়াস সিজার, ক্লিওপেট্রা, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, ভ্যাটিক্যান সিটি, ভেনিসের গন্ডোলা, ফুটবল প্রেমী মানুষদের প্রিয় ক্লাব এ সি মিলান ইত্যাদি। সেই শতাব্দী প্রাচীন, ঐতিহাসিক ইতালি দেখতে যাওয়া হল। আমার মেয়ে সঞ্চিতার সহকর্মী জাবেদ ইতালির মিলানের কনসাল জেনারেল। জাবেদের আমন্ত্রণে জেনেভা থেকে মিলানে যাত্রা করলাম। জেনেভা থেকে বাসে চার ঘন্টার কিছু বেশি সময়ে মিলানে পৌছালাম। মিলানের বাস টার্মিনালে জাবেদের পাঠানো গাড়িতেই আমাদের ইতালি ভ্রমণ শুরু হলো। আমাদের ভ্রমণ সঙ্গী মিলান কনসুলেটের আর এক…
-
শানশি লাইব্রেরি ও মোরগ ডাক
শানশি লাইব্রেরি ও মোরগ ডাক ইমরুল কায়েস ২৫ জুন ছিল আরেকটা অনলাইন কর্মসূচি। ভার্চুয়ালি শানশি প্রদেশ পররাষ্ট্র দপ্তরের লাইব্রেরি পরিদর্শন। যথারীতি কর্মসূচিটি টেনসেন্ট অ্যাপসে হয়। টেনসেন্ট জুমের মতোই চীনাদের নিজস্ব অ্যাপস। মোবাইলের মাধ্যমে এদিনও জয়েন করতে গিয়ে বেশ ঝক্কিতে পড়তে হল। আরও দু’একজনও একই সমস্যায় পড়ে। তবে পরে বুঝতে পারলাম ভুলটা আমাদেরই। ভিপিএন চালু রাখায় টেনসেন্টে জয়েন করা যাচ্ছে না। ভিপিএন বন্ধ করতে সহজেই টেনসেন্টে জয়েন করা সম্ভব হল। উইচ্যাটের সিএপিপিসি গ্রুপে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করায় অন্যরাও দ্রুত জয়েন করতে সক্ষম হন। অর্থাৎ তারাও ভিপিএন চালু রেখে চেষ্টা করায় এতোক্ষণ জয়েন করতে পারে নাই। ভিপিএন চালু রাখলে চীনা যোগাযোগ…
-
টেরাকোটা আর্মি
টেরাকোটা আর্মি: মাটির নিচে এক দুর্ধর্ষ বাহিনী ইমরুল কায়েস উইচ্যাটে সিএপিপিসি (চায়না এশিয়া-প্যাসিফিক প্রেস সেন্টার) নামে একটা গ্রুপ আছে। এটি খুলেছে আয়োজকরা। গ্রুপে সপ্তাহের কার্যক্রম জানিয়ে দেয়া হয়। এই গ্রুপে জানানো হল ২২ জুন একটা ভার্চুয়াল ভিজিট আছে। টেরাকোটা ওয়ারিওর্স মিউজিয়াম ভিজিট। আমি অবশ্য ২০১৯ সালে একবার সরাসরি টেরাকোটা ওয়ারিওর্স মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম। সেবার ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল চীনের এই বিস্ময়কর পুরাকীর্তি। টেরাকোটা আর্মি সম্পর্কে আরও বেশি জানা এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবারের ভার্চুয়াল ভিজিটেও যোগ দিলাম। ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম থেকে টেরাকোটা আর্মিদের সম্পর্কে ধারণা যতটা পরিস্কার হল আগেরবার সরাসরি দেখেও তা হয়নি। কারণ সরাসরি দেখতে গিয়ে গাইডের অনেক কথাই মনোযোগ…
-
চাইনিজ নট ও দারোয়ানের গল্প
চাইনিজ নট ও দারোয়ানের গল্প ইমরুল কায়েস জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে রাস্তায় বিদ্যুৎ খুঁটির সাথে লাগানো একটা সিম্বল চোখে পড়ে। পুরো রাস্তার সব বিদ্যুৎ খুঁটির সাথেই এই লাল রঙের সিম্বল লাগানো। পাশাপাশি দুটি সিম্বল। খাড়া দন্ডের উপর চতুর্ভুজাকৃতির উপরের দিকটা চওড়া। দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মত। রাতের বেলায় সিম্বলগুলো লাল আলোয় আলোকোজ্জ্বল হয়ে থাকে। সারি সারি এরকম আলোকিত লাল সিম্বলগুলো দেখতে অপূর্ব লাগে। মনে হয় একদল প্রজাপতি লাল পেখম মেলে নিশ্চল দাঁড়িয়ে। মনে মনে প্রশ্ন জাগে নিশ্চয়ই এগুলোর কোন গুঢ়ার্থ আছে। সেটা জানতে হবে। একবার ভাবলাম চীন যেহেতু সমাজতান্ত্রিক দেশ সেহেতু একরম লাল রঙের সিম্বল থাকতেই পারে। কারণ কমিউনিস্টদের সিম্বল…
-
কুনমিংয়ের বৃষ্টি ও শৈশবের বৃষ্টিবিলাস
কুনমিংয়ের বৃষ্টি ও শৈশবের বৃষ্টিবিলাস কয়েকদিন হয়ে গেল সূর্যের দেখা নাই। কুনমিংয়ের আকাশটা মেঘলাই থাকে সারাক্ষণ। পরিবেশটা কেমন বিষন্ন। কিছুক্ষণ পর পর ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়ে। কখনো বেডরুমের, কখনো ড্রয়িংরুমের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখি। এটাকে জানালা বললে ভুল হবে। ড্রয়িং রুমের পশ্চিম পাশের পুরো একটা দেয়াল স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে তৈরি। কাঁচের দেয়ালে ছোট্ট একটা জানালা। মাঝেমাঝে খুলে দিলে বাইরের হাল্কা শীতল বাতাস ঘরে প্রবেশ করে। বেডরুমেরও একই অবস্থা। দক্ষিণ পাশের পুরো অর্ধেক দেয়াল স্বচ্ছ কাঁচের। এর একপাশে ছোট্ট একটা জানালা। দক্ষিণা জানালা। তবে বৃষ্টি দেখার জন্য দক্ষিণা জানালা খোলার দরকার পড়ে না। পর্দা সরালেই বাহিরটা দেখা যায়। রুমের…
-
ফেসবুক-মেসেঞ্জারবিহীন কোয়ারেন্টাইন
ফেসবুক-মেসেঞ্জারবিহীন কোয়ারেন্টাইন ইমরুল কায়েস প্রতিদিনই দেশে থাকা স্ত্রী সন্তানদের সাথে কয়েক দফা কথা হয়। মুশকিল হল ছোট ছেলেকে নিয়ে। ওর বয়স সবে দুই বছর আট মাস। ফোন দিলে কিছু কিছু সময় আর কাউকে কথা বলতে দেয় না। এমনকি বড় ছেলেকেও নয়। ও নিজেও এখনো সব কথা বলতে পারে না। শুধু বলবে, অ্যালো, বাবা কি কল (কর)? আবার কল কাটতেও দেবে না। ভিডিও কল দিয়ে সামনে বসে থাকতে হবে। আর মাঝে মাঝে অ্যালো, বাবা কি কল বলবে। ভাগ্যিস দেশ থেকে আসার আগে স্ত্রীর মোবাইলে একটা উইচ্যাট একাউন্ট খুলে দিয়েছিলাম। কোন কারণে অন্যান্য মাধ্যমে কথা না বলতে পারলেও যাতে উইচ্যাটের মাধ্যমে…