স্বপ্ন-ও-স্বাধীনতা
কবিতা,  জাহাঙ্গীর পানু,  সাহিত্য

স্বপ্ন ও স্বাধীনতা, অস্পৃশ্য স্বপ্ন, বাংলার কৃষক

স্বপ্ন ও স্বাধীনতা

জাহাঙ্গীর পানু

 

আমার স্বপ্ন দেখা স্বাধীনতাকে ঘিরে
অবারিত দিগন্ত জোড়া সবুজ ধানক্ষেতে
মৃদু হাওয়ায় দোল খাওয়া
পাখির কলকাকলীতে কেটে যায় ভোর
স্রোতস্বিনী পদ্মার কোল ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে দেখা ঢেউ বয়ে যাওয়া
ফাগুনের গাছের ডালে গজানো কচি পাতার
নিঃশব্দে বেড়ে ওঠা,
আনন্দে উদ্বেলিত বিকেলের সবুজ প্রান্তরে
শিশু কিশোরের ছোটাছুটি,
সকালে পূব আকাশে সোনালী রঙে
উদিত হওয়া রুপালী রবি।
পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ঝলমলে
শ্রাবণের কুমারী নদী।

আমার স্বপ্ন বুনন স্বাধীনতাকে নিয়ে
ইচ্ছের স্বপ্নেরা যেন থমকে না যায়
পথহারা পাখিদের ভিড়ে,
মানবিক মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য
জীবন যাবে না অন্যের পানে চেয়ে।
নারীর সম্ভ্রম যেন না যায়
অন্যের লালায়িত জিঘাংসা পূরণে।
শোষিত মানুষের হাহাকার যেন আর কখনো
শুনতে না পাই এই জন্মভূমিতে।

আমার স্বপ্ন ঘেরা এমন স্বাধীনতাকে চেয়ে,
যেখানে থাকবেনা কোনো অত্যাচার, অনাচার,
অবিচার, শোষণবিহীন, দূর্নীতিমুক্ত
এক কল্যাণকর সমাজ রাষ্ট্র হবে-
আমাদের ত্যাগের বিনিময়ে।

আরও পড়ুন কবি জাহাঙ্গীর পানুর কবিতা-
শ্বাশত বাণী
বেকারত্ব

 

অস্পৃশ্য স্বপ্ন

হে স্বদেশ ভূমি!
তুমি ভুলে গিয়েছো তোমার গতিপথ
অমানিশার কালো মেঘে আজ আচ্ছন্ন তোমার গগণ
কন্টকাকীর্ণ কাঁটানটে আগাছায় ভরে তোমার আঙিনা।
ভিন্ন মত প্রকাশে অসহনশীল দানবীয় চেহারা ফুটে ওঠে
তোমার মুখাবয়বে
তোমার ভাড়াটে হিংস্রের থাবায় রক্তাক্ত পদ্মা-যমুনার নীল জলরাশি
কিন্তু তুমি ভুলে গিয়েছো-
স্বাধীনতার সঞ্জীবনী গান, স্বাধিকারের চেতনাময় স্লোগান-
“তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা। ”
মাতৃভূমির প্রতি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ একদল শ্রমজীবী
স্বাধীনচেতা মানুষের রক্তঝরা জীবনের বিনিময়ে
এসেছিলে তুমি এ শ্যামল ভূখণ্ডে।
তবে কি স্বাধীনতা আবারও হবে পরাভূত?
কূটকৌশলী বেনিয়াদের যড়যন্ত্রে।
শ্রমিকের ঘামের প্রতিটি নোনা জলের ফোঁটায় গড়ে ওঠে
তোমার ইচ্ছা অনিচ্ছায় সাজানো অপ্রয়োজনীয় বাগান।
শপথের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের খেলায় মেতে উঠেছো তুমি!
রক্তচোষা হিংস্র পড়শীর হস্তে অর্পিত করেছো আজ
তোমার সহোদরদের ভাগ্যরেখা।
তোমার সিংহাসনের আসীন আজ তাদেরই অনুগত
আজ্ঞাবহ রাজাধিরাজ।
তুমি ভুলে গিয়েছো তোমার ধর্ম, তোমার আত্মপরিচয়
স্বাধীনতার এক মুঠো সোনালী রোদ পোহাতে চাওয়া,
আজ এক অস্পৃশ্য স্বপ্ন।

 

বাংলার কৃষক

জমিতে লাঙ্গল দিয়ে বীজ রোপণ করে
শরীরে অনেক কষ্ট সহে রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।

শীতের ভোরে যখন মাঠের কাজে যায়
কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় কত কষ্ট পায়।

প্রখর উত্তপ্ত রোদে বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে
পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে বেলা শেষে আসে।

পানিতে পচায়ে পাট, আলাদা করে পাটখড়ি
রোদে শুকিয়ে আঁশ, বেধে বাঁশের আড়ানি।

বর্ষার পানিতে দাঁড়িয়ে কাজে সারা দিনভর
জোঁকে খায় রক্ত আর ঘায়ে পচে পায়ের কর।

চৈত্র মাসে মাঠের ফসল তুলতে গিয়ে ঘরে
তৃষ্ণায় ছাতি ফাটে গা ভিজে গরমের তরে।

ধানের আগাছা পরিষ্কার করে দুপায়ে বসে
মাথায় ধানের বোঝা নিয়ে পায়ে হেটে চলে।

তাদের পরিশ্রমে জোটে খাবার আমাদের
এভাবেই জীবন কাটে বাংলার কৃষকের।

আরও পড়ুন কবিতা-
বিষণ্ন বাসন্তী বাংলা
তিতাস নদীর পাড়ে
আকাশে ডানা মেলে
দাঁড়িয়ে আছি ভুল দরজায়

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

স্বপ্ন ও স্বাধীনতা

Facebook Comments Box

কবি জাহাঙ্গীর পানু—এক নিরন্তর পথিক, যাঁর কলম চলে জীবনের বিভিন্ন বাঁকে। তাঁর লেখালেখির কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই; সময়, প্রাসঙ্গিকতা এবং অন্তরের আকর্ষণই তাঁকে পথ দেখায়। তিনি শব্দের মাঝেই খুঁজে নেন জীবনের গভীরতাকে, যেখানে প্রতিফলিত হয় তাঁর অনুভূতির মগ্নজগৎ। তাঁর সৃষ্টিকর্মে গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা, প্রকৃতির মমতা, আর মানুষের অন্তর্লীন আবেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনো তাঁর রচনায় দেখা মেলে গ্রামবাংলার উর্বর মাটির টান, কখনোবা সংস্কৃতির রঙিন বৈচিত্র্য। প্রতিটি লেখায় তিনি সময়ের চিহ্ন ধরে জীবনের মায়াজাল বুনে চলেন। তিনি নিয়মিত লিখছেন ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনে, যেখানে তাঁর লেখাগুলোর মাধ্যমে পাঠক খুঁজে পান নতুন এক ভাবনার দিগন্ত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণতার নীল চাদর” এক অনন্য সংকলন, যেখানে বিষণ্ণতার নীল ছায়ায় ঢাকা জীবনের নানা রূপ, অনুভূতি আর প্রতিফলন মূর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে জন্ম নেওয়া কবি জাহাঙ্গীর পানু প্রকৃতির স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা এক সৃষ্টিশীল কবি। তাঁর লেখায় আজও মেলে সেই মাটির গন্ধ আর শেকড়ের টান।

error: Content is protected !!