বিমল কুণ্ডু
বিমল কুণ্ডু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
জন্ম: বিমল কুণ্ডু ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত মানিকহাট ইউনিয়নের রাইপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিক জীবন: পিতা স্বর্গীয় জগবন্ধু ও মা অনিলা কুণ্ডুর সাত সন্তানের কনিষ্ঠ সন্তান তিনি। স্ত্রী গৃহলক্ষ্মী। ব্যক্তিজীবনে দুই পুত্রের জনক।
শিক্ষা জীবন: বিমল কুণ্ডু গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি এবং ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
আরও পড়ুন অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন
মুক্তিযুদ্ধ: ৭ই মার্চ, ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর ১৪ই মার্চ গ্রামে ফিরে মালিফা হাইস্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক জনাব ফজলুল হক সহ স্থানীয় যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত করেন। এপ্রিল মাসে এলাকার শত শত লোক নিয়ে নগরবাড়ি ঘাট অবরোধে অংশগ্রহণ করেন। ১২শে মে পাকবাহিনী কর্তৃক এলাকায় গণহত্যার পর পালিয়ে ভারত গমন করেন। এরপর কেচুয়াডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগদান করেন। উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য মালন্চা যুব ক্যাম্পে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখান থেকে তাঁকে পতিরাম ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়। পশ্চিম বাংলার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় কর্তৃক উক্ত ট্রেনিং ক্যাম্প উদ্বোধন কালে তিনি জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন এনএস সিরোহী কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে উক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মোটিভেশান প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কর্ম জীবন: কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বিসিএস এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, উপ-সচিব ও যুগ্ম-সচিব পদে সরকারি চাকরি করেছেন দীর্ঘ তেত্রিশ বছর। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে যোগ দিয়েছেন দেশে বিদেশে। সঞ্চয় করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে চাকরি করেছেন সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, খুলনা, ময়মনসিংহ জেলায়; উপ সচিব হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে। জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ঝালকাঠি জেলায়। যুগ্ম সচিব হিসেবে বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর অবসরগ্রহণ করেন। কর্মজীবনের সর্বক্ষেত্রে রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেও হয়েছেন প্রশংসিত। অবসর জীবন অতিবাহিত করছেন লেখালেখি করে।
আরও পড়ুন কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দীন
রাজনৈতিক জীবন: বিমল কুণ্ডু ১৯৬৯-১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জগন্নাথ হল ছাত্রলীগ শাখার সদস্য ছিলেন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ জাতীয় নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ.টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে বৃহত্তর ফরিদপুর আঞ্চলিক টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ টিম লিডার ও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগের টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লেখালেখি: কলেজ জীবনে প্রথমে কবিতা দিয়ে হাতে খড়ি হলেও, পরবর্তীতে কবিতা, ছোট গল্প প্রকাশ হয়েছে দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞানের প্রতি লেখকের রয়েছে অপার আগ্রহ। তাই তাঁর প্রায় সব লেখায়ই উঠে আসে দার্শনিক অন্বেষা, আত্মসচেতনতা, মানবপ্রেম, চলমান সমাজ পরিবর্তনের ধারা ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অপার রহস্য আবিষ্কার ও জানার অপ্রতিরোধ্য প্রচেষ্টা তাকে সম্মুখের দিকে নিরন্তর টানে। বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অলৌকিক, কু-সংস্কারের বেড়া ডিঙিয়ে ঘুরে বেড়ান সত্যানুসন্ধানে। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪টি।
প্রকাশনা:
কাব্যগ্রন্থ:
- শূন্য বিন্দুর সন্ধানে
- ঘুরে দাঁড়াও ব্যবিলন
- কাল আবার কি হবে
উপন্যাস:
- স্বাধীনতার প্রেম কাহিনী (পুরষ্কার প্রাপ্ত)
- বীরঙ্গনা অনন্তর সূর্য
- সন্ন্যাসী (অনুবাদ)
- হাসি কান্নার জীবন
- মোতালেব পাগল ও তাহাদের কথা (২০১৯ খ্রি.)
গবেষণা:
- হিন্দুধর্মের উৎস সন্ধানে
- হিন্দুধর্মের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
- ছোটদের হিন্দুধর্মের ইতিহাস
- মহাভারতের ট্র্যাজিক হিরো
- সীতা ও দ্রৌপদী
গল্পগ্রন্থ:
- হারাধন কই গেলি
প্রকাশিতব্য:
- শ্রীকৃষ্ণ সমাচার
- বেদের কথা
- একজন বাঙালি
সন্মাননা: সোনার বাংলা সাহিত্য পরিষদ।
আরও পড়ুন আবদুল গনি হাজারী
সংস্কৃতি: ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পর পর তিন টার্ম বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
সামাজিক ও শিক্ষা:
- রাইপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভাপতি
- ঝালকাঠি কালেক্টরেট জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠিতা
- ঝালকাঠি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা
- শিল্পকলা একাডেমি ও ডায়াবেটিস সমিতির উদ্যোক্তা
বিমল কুণ্ডুর প্রিয় ব্যক্তিত্ব স্বামী বিবেকানন্দ। অবসরে বইপড়া, গান শোনা ও লেখালেখি করে সময় অতিবাহিত করেন। মৎস্য শিকার করা তাঁর অন্যতম শখ।
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে