তৃষ্ণাদুপুর
আদ্যনাথ ঘোষ,  কবিতা,  সাহিত্য

তৃষ্ণাদুপুর, শিল্পলিপি, যমুনার জল, স্বপ্নভঙ্গ

তৃষ্ণাদুপুর

আদ্যনাথ ঘোষ

 

ও আলো যৌবন দাও, ঢেলে দাও তোমার অতল ফাগুন।
পৃথিবীর দুঃখভরা গভীর বিষাদ দূর হয়ে যাক, দ্রুত-
শনশন ঝড়ের বেগে ঊর্বরা হাওয়ায়।

চরম সত্যের পথে যদি পাহাড়ের বাধা,
তবে কীভাবে যে ফুটবে ফুলের কুসুম!
ডানা মেলে দেখা দেবে পাখির ঝলক।

ছয়টি ঋতু কীভাবে যে গোপনেই গুছিয়ে ফেলে
তোমার তৃষ্ণাদুপুর!

ভাঙা বাসনায় যদি গ্রাস করে শরীরের জল-
তৃষ্ণার পৃথিবী ছুঁয়ে একবার দেহখানি কামনার গন্ধে ভাসে;
তবে কী বিলীন হয় সাধ!

আরও পড়ুন আদ্যনাথ ঘোষের কবিতা-
নিরাশার মাঝে
উৎসব
আনন্দের ধারা

 

শিল্পলিপি

অর্ধেকটা রেখে দিয়ে বাকি অর্ধেক উনুন জ্বেলে
অসমাপ্ত রাখিনি তো জল মাটি হাওয়া।

যতই লিখি ছাইলিপি-যতই লিখি জললিপি
কীভাবে যে লিখে ফেলি শিল্পলিপি মন!

আমার তোমার দেখা হলে
মাটি থেকে দেহ;
দেহ থেকে জল হাওয়া, ভেসে চলে রোদ।

কেমন করে জীবন চলে, কেমন মনের গতি
মানুষ যেমন কালি ও কলম
লিখে চলে ফুলে ফলে গোলাপ দুপুর ভরি-
তৃষ্ণাকাতর গলুই।

 

যমুনার জল

স্পর্শগুলো ভুলে গেলে শ্রীরাধিকা।
আগুনের গোলা বুকে নিয়ে
ফুলেরা মিছিল করে।

সিদ্ধপুরুষও মতিভ্রম হয়।
শতদলপদ্ম জলে ফোটে-
রাঙা জলে জ্বলে ওঠে
ফুটন্ত বসন্ত।
আগুনকে-
দাউদাউ পোড়ায়।
চারদিক আগুন পোড়ে-
পার ভাঙে।

জ্বলে জ্বলে জল হয়
পিপাসা মেটায়।

শ্রীরাধিকা,
তোমার আমার অনুভব যমুনার জল।

 

স্বপ্নভঙ্গ

(কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী স্মরণে)

দু-চোখ ভরেই দেখো মানুষের আশাহীন রোদ-
প্রতীক্ষার দাহ, স্বপ্নভঙ্গ আর ভোরের ক্ষরণ।
শূন্য পাত্র হাতে নিয়ে যদি জমে উঠে ঝাঁক ঝাঁক বুকের স্ফুরণ
তাহলে কী মিলিবে সকালের রোদভরা ঝলমল আকাশ!

অথচ বুকের মধ্যে জমে উঠে সোনালি বয়ানের ঘুমজাগা পাখি
প্রতিশ্রুতির পাখনায় ভেসে চলা গাঙচিল, রোদ্রালি আকাশ!

দুর্দশার ঘনঘোরে মাঠের ক্ষতচিহ্নগুলো চোখে ভেসে ওঠে
বুকচাপা দীর্ঘশ্বাস ঘরের ভেতর
শুধুই হাপিত্যেশ করে-বুকের ভেতরে ক্ষত জমা হয়-
মেঘেরা দল বেঁধে নামে-ছুঁয়ে যায় মধ্যরাত-
অশ্রু ফেলে অনুতাপ, জেগে থাকে বিরাণ অন্তর।

সেখানে কি দেখা দেবে বেহুলার ঢল, কৃষ্ণের বাঁশি, জোছনাভোর?

আরও পড়ুন কবিতা-
চাইনি এমন স্বদেশ
ভালোবাসা
আমার সংসার

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

তৃষ্ণাদুপুর

Facebook Comments Box

কবি ও প্রাবন্ধিক আদ্যনাথ ঘোষের স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি। তিনি প্রতিনিয়ত কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখে চলেছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: আলোর রেখা, লাল নীল শাড়ির আঁচল, হৃদয়ে উতল হাওয়া, জন্মভূমি তুমি মাগো, আমি তোমাদেরই একজন, উত্তরের জানালা, ভোরের পাখি, স্বপ্নবালিকা, বিধিলিপি মন, একমুঠো স্বপ্নের রোদ্দুর ও তৃষ্ণার পৃথিবী ছুঁয়ে। তিনি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের  অন্তর্গত  পদ্মার তীরবর্তী নিসর্গ সৌন্দর্যশোভিত গ্রাম হেমরাজপুরে ১৯৭৩ সালের ২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষক হিসেবে পাবনা জেলা স্কুলে কর্মরত আছেন।

error: Content is protected !!