আবু জাফর খান
আবু জাফর খান পেশায় একজন চিকিৎসক। ভাবনায় কবি, কথাশিল্পী ও সংগঠক। তাঁর পুরো নাম কে এম আবু জাফর। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক পদে কর্মরত আছেন।
লেখক হিসেবে আবু জাফর খান এর বিশেষত্ব, তিনি নিবিড় অন্তর অনুভবে প্রত্যহ ঘটে চলা নানান ঘটনা, জীবনের গতি প্রকৃতি, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, ব্যক্তিক দহনের সামষ্টিক যন্ত্রণা তুলে আনেন নান্দনিক উপলব্ধির নিপুণ উপস্থাপনায়। তাঁর লেখায় ধ্বনিত হয় বিবেক কথনের অকৃত্রিম প্রতিভাষা। তিনি তাঁর লেখায় প্রতিধ্বনিত করেন নন্দনতাত্ত্বিকতায় জীবন বোধের সমকালীন বাস্তবতা।
জন্ম: কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খান ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বাল্যকাল: আকৈশোর মাটির কাছাকাছি নিবিড় সময় কেটেছে তাঁর। কৈশোরে গাঁয়ের মেঠোপথের ধারে বসে গোধূলির রাঙা আলোয় পাখিদের নীড়ে ফেরা দেখতেন, কল্পনায় হারিয়ে যেতেন ডুবন্ত সূর্যের রক্তিম দেশে আর জ্যোৎস্নার রূপোলী আলোয় খোলা মাঠে উন্মন ভাবনার পাণ্ডুর রঙে কষ্টের রূপ খুঁজতেন। ভাবনার এলোপথে হারিয়ে যেতেন অচিন দেশে।
আরও পড়ুন ডা. অশোক কুমার বাগচী
পারিবারিক জীবন: পিতা মরহুম আলহাজ্ব দারবার আলী খান ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। তাঁর যৌবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন কোলকাতায়। পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। মাতা মরহুমা আনোয়ারা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
শিক্ষা জীবন: আবু জাফর খান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউনিটি মেডিসিনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্ম জীবন: বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক পদে কর্মরত আছেন।
লেখালেখি: চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যয়নকালে সতত খুঁজেছেন অন্তর্জগতের স্বরূ। ভাবনার অতলে ডুব দিয়ে অন্তর্গূঢ় রহস্য ভেদের অদম্য আকাঙ্ক্ষায় স্বপ্ন আর শুদ্ধতার নিগূঢ়ে পৌঁছে, বোধির গহনে প্রবেশ করে পরাবাস্তবতার অনিন্দ্যসুন্দর অন্য এক ভুবনের রহস্যদ্বার খুলে যায় তাঁর অন্তর্দৃষ্টির সীমানায়। এভাবেই ক্রমশ তাঁর লেখক হয়ে ওঠা।
তিনি ১৩ বছর বয়সে প্রথম কবিতা লেখেন। স্কুলের দেয়াল পত্রিকায় সেটি প্রকাশও হয়। ১৬ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস রচনা করেন। যদিও সেই পাণ্ডুলিপিটি পরবর্তীতে খোয়া যায়। লেখা এবং লেখার প্রতি অনন্তর ভালোলাগা এবং এভাবেই নির্মিত হয়ে ওঠে অন্য এক রূপময় স্বপ্নিল ও বাস্তব ভাবনার বিম্বিত লেখক সত্তা।
আরও পড়ুন অধ্যাপক ডা. রুহুল আবিদ
প্রকাশনা: আবু জাফর খান এর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে বেশ কয়টি উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ দেশে এবং দেশের বাইরে ভারত, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকায় বাংলাভাষী পাঠকের মাঝে বিপুল সারা জাগায়; দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন পত্রিকায় আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।
বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা পোয়েমভেইন.কম এর সম্পাদকীয় মণ্ডলীর সভাপতি ও ‘বাংলাদেশ কবিতা মঞ্চ, ঢাকা’ সংগঠনের সভাপতি।
এ পর্যন্ত এককভাবে তাঁর ২০টি গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ২টি গল্পগ্রন্থ এবং ৮টি উপন্যাস। যৌথভাবে দুই বাংলার কবিদের সঙ্গে ৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
কাব্যগ্রন্থ:
- পাথর সিঁড়িতে সূর্যাস্ত বাসনা (২০০৮ খ্রি.)
- অনির্বেয় আকাঙ্ক্ষায় পুড়ি (২০১০ খ্রি.)
- যে আগুনে মন পোড়ে (২০১৬ খ্রি.)
- যূপকাঠে যুবক (২০১৭ খ্রি.)
- একটি জিজ্ঞাসাচিহ্নের ভেতর (২০১৭ খ্রি.)
- সোনালী ধানফুল (২০১৮ খ্রি.)
- রাতভর শিমুল ফোটে (২০১৯ খ্রি.)
- বীজঠোঁটে রক্তদ্রোণ ফুল (২০২০ খ্রি.)
- স্যন্দিত বরফের কান্না (২০২১ খ্রি.)
- প্রত্নপাথর মায়া (২০২২ খ্রি.)
আরও পড়ুন বাংলাদেশে বইমেলার প্রবর্তক সরদার জয়েনউদ্দীন
গল্পগ্রন্থ:
- মাধবী নিশীথিনী (২০১৪ খ্রি.)
- পথে পথে রক্ত জবা (২০১৯ খ্রি.)
উপন্যাস:
- মেখলায় ম্যাগনোলিয়ার মুখ (২০১১ খ্রি.)
- জ্যোৎস্নায় ফুল ফোটার শব্দ (২০১২ খ্রি.)
- কুমারীর অনন্তবাসনা (২০১৩ খ্রি.)
- জ্যোৎস্নাবাসর (২০১৩ খ্রি.)
- মেঘের বসন্তদিন (২০১৪ খ্রি.)
- রূপোলী হাওয়ার রাত (২০১৪ খ্রি.)
- একাত্তরের ভোর (২০১৭ খ্রি.)
- তৃতীয় ছায়া (২০২০ খ্রি.)
নিসর্গের স্বগীয় সৌন্দর্যের পূজারি কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খান ভাঙনকালের তমসায় দাঁড়িয়ে দহনখেয়ায় ভাসতে দেখেন “সোনালি পাখির মায়া”! যেন হেমাঙ্গিনি মেয়ে আবার ফেরে মাটির মায়ার টানে। লেখক আকণ্ঠ ডুবে যাওয়া পঙ্কিল ভূমির বুকজুড়ে ফলিয়ে তোলেন হেম পক্ষীর উড়াল। কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খান এর স্বাতন্ত্র্য এখানেই।
আরও পড়ুন সুজানগর উপজেলার প্রথম এমএ পাশ মাওলানা রইচ উদ্দিন
সম্মাননা: বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যে তিনি অর্জন করেছেন-
- ‘বাংলাদেশ কবিতা সংসদ’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক (২০১৭ খ্রি.), রবীন্দ্র স্মারক সম্মাননা (১৪২৩ বঙ্গাব্দ), আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে কথা সাহিত্যে (বাংলাদেশ) বাংলা সাহিত্য পদক (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), কথাসাহিত্যে বাংলা সাহিত্য স্বর্ণ পদক (১৪২৬ বঙ্গাব্দ)
- কোলকাতা থেকে ড. বি আর আম্বেদকর সাহিত্য সম্মাননা (২০১৭ খ্রি.),
- কোলকাতা থেকে প্রকাশিত চোখ পত্রিকার পক্ষ থেকে চোখ সাহিত্য পদক (২০১৮ খ্রি.),
- কবি জসীম উদ্দীন পরিষদ কর্তৃক পল্লী কবি জসীম উদ্দীন স্বর্ণ পদক (২০১৮ খ্রি.),
- পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে নজরুল সাহিত্য স্মৃতি স্বর্ণ পদক (২০১৮ খ্রি.),
- মাইকেল মধুসূদন একাডেমি, ভারত থেকে মাইকেল মধুসূদন স্মৃতি সম্মাননা (২০১৮ খ্রি.),
- নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন এর পক্ষ থেকে সম্মাননা পদক (১৪২৫ বঙ্গাব্দ)।
আরও পড়ুন জ্যোতির্বিজ্ঞানী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার
জীবনের প্রাত্যহিকতায় বৃত্তবন্দি জীবন তাঁর একেবারেই ভালো লাগে না। নিসর্গের অভাবিত সুন্দর নিত্য তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। তিনি ক্রমাগত হাঁটতে থাকেন নিরুদ্দেশের অভিযাত্রীর মতো সাগরতটের ভেজাবালিপথ ধরে। মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব, সমরাস্ত্রের ঝলকানি, কীর্ণ অশান্ত পৃথিবী তাঁকে আহত করে। তিনি প্রতিনিয়ত শান্তিময় পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। মানুষের মনোদৈনতা, অন্তর্গত সংকীর্ণতা, মালিন্য, কৌলুষ, আবিলতা তাঁকে প্রতিনিয়ত ধ্বস্তবিধ্বস্ত করে, বেদনার অতলে ডুবিয়ে দেয়।
লেখক আবু জাফর খান জীবনকে দেখেন ভালোবাসা আর মানবিকতার অন্তর আলোয়। তাই তিনি অবলীলায় বলে উঠতে পারেন, ‘ভালোবাসারও নিজস্ব অন্ধকার আছে’!
আত্মপ্রচার বিমুখ এই সাহিত্য প্রতিভা নীরবে নিভৃতে নিরন্তর সাহিত্য চর্চা করে যাচ্ছেন।
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে